প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৬, ২০২৫, ১০:৩৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৩, ৬:৫০ পি.এম
আল জাজিরার রিপোর্ট: যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তুলেছে
![]()
ডেস্ক: যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তুলেছে। ব্যাপক রক্তপাতের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চার দশক পরে যুদ্ধাপরাধের বিচার ফের সেই পুরনো ক্ষতকে নাড়া দিয়েছে গরিব অথচ গর্বিত বাঙালি জাতিকে। কিন্তু এ জাতি গভীরভাবে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। গতকাল অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের লেখাÑ ‘ওয়ার ট্রায়ালস রি-ওপেন ওল্ ওন্ড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দীর্ঘ প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন। এতে তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের মতে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানি সেনারা ও তাদের সমর্থনকারী বিদ্রোহীরা ধর্ষণ করে আড়াই লাখ নারীকে। এ রায় নিয়ে সাংবাদিক ও লেখক হারুন হাবীব বলেন, ওটা ছিল আমাদের সময়ের সবচেয়ে রক্তপাতের যুদ্ধ। তাই এত মানুষ দীর্ঘদিন সুবিচারের জন্য কান্না করছেন। তিনি বিশ্বাস করেনÑ এখন ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদার আওয়ামী লীগ ও ইসলামপন্থি জামায়াতের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। গতকাল আদালত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ সহ অন্যান্য মোট ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। প্রসিকিউশন আদালতে যে চার্জশিট দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, তিনি ঢাকার মিরপুরে ৩৪৪ জনকে গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের জোট কাদের মোল্লাকে দেয়া শাস্তিকে অতি বিলম্বে দেয়া সামান্য শাস্তি হিসেবে অভিহিত করছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, এই রায় জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে। তারা আরও কঠোর সাজা প্রত্যাশা করেছিলেন। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, প্রসিকিউশন চাইলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। এ রায়ে সন্তুষ্ট নন জামায়াতে ইসলামীর বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছেন। গত ২১শে জানুয়ারি আরেক আদালত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম কে আলমগীর বলেছেন, তার সরকার জানে আযাদ কোথায় আছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে তার সরকার। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তার মিত্র জামায়াত। এ দুটি দল মিলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জোট সরকার গঠন করেছিল। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধ আদালতকে পক্ষপাতমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলেছেন, বিএনপিকে ঘায়েল করে বাঙালি সেন্টিমেন্ট তাদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। যদি ১৯৭১ সালের দেশপ্রেম, ভালবাসা জেগে ওঠে তাতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকশিত হবে এবং তা আওয়ামী লীগ বিরোধী এখন যে মনোভাব গড়ে উঠেছে তার প্রেক্ষিতে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ আদালতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা সমালোচনা করছেন। তারা এ আদালতের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃশ্যত অদম্য। আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর পরই জামায়াতের অনির্দিষ্টকালের হরতালের হুমকির পর তিনি ওই দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি রংপুরে বলেছেন, আপনারা যদি যুদ্ধাপরাধ আদালতের কার্যক্রম বন্ধের জন্য চলমান সহিংসতা অব্যাহত রাখেন তাহলে আপনাদেরকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের মোটামুটি এক বছরের মতো সময় আছে। এ সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করে দিতে চান। তাদের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারেনি বিএনপি। ‘বাংলাদেশ ইলেকশনস’ বইয়ের লেখক শামসুল আরেফিন বলেন, এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ। বিএনপিতে অনেকে আছেন যারা জামায়াতকে পছন্দ করেন না। কিন্তু জামায়াত ছাড়া তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেতার কোন পথ নেই।মানবজমিন
Copyright © 2025 USA NEWS ONLINE. All rights reserved. Developed by TEKSERV.