বুড়িয়ে যেতে কেই-বা চান। চুল পাকা তো বুড়িয়ে যাওয়ারই লক্ষণ। তাই পাকা চুল কালো করে তারুণ্য ধরে রাখতে মানুষের চেষ্টায় কমতি নেই। তবে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের চুল কালো করার রহস্য তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়া আড়াল করা বা তারুণ্য ধরে রাখা নয়। এর পেছনে রয়েছে শুধুই ‘রাজনীতি’। কালো স্যুট, লাল টাই সঙ্গে বাহারি কালো চুল, চীনের ক্ষমতাসীনদের ঐক্যের প্রতীক। গেল সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হলো পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশন। অধিবেশনে সমবেত হয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির অভিজাত নেতারা। সবার পরনেই ছিল এই একই পোশাক। জাতীয় সংগীতের সুর বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবাই দাঁড়ালেন সারিবদ্ধভাবে। সবার সামনে ছিল সাদা চায়ের কাপ ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের একটি করে অনুলিপি। কিছুটা দূর থেকে তাকালে তাঁদের একজনকে অন্যজন থেকে আলাদা করা কঠিন। তবে গত বছরের নভেম্বরে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা। সম্মেলনে প্রটোকল ভেঙে ধূসর হয়ে পড়া অনুজ্জ্বল চুল ও স্বাভাবিক বেশভূষায় যোগ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝু রংজি। টেলিভিশনে এই দৃশ্য দেখে ওয়েইবো নামের একজন টুইটারে লেখেন, ‘সম্মেলনের মঞ্চের দিক দেখুন। সবাই কেমন চুল কালো করেছে। দেখে মনে হচ্ছে, সবাই তরুণ।’ চীনা নেতাদের কালো চুলের প্রতি এই যে মোহ, তা দেশের আপামর জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে না। দীর্ঘদিন ধরে চুলের ফ্যাশন করার কাজ করেন হং হাইতিং। তাঁর কথায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে চীনা নারীদের চুল কালো করায় আগ্রহ বেশি। আর অধিকাংশ সাধারণ পুরুষ চুল কালো করার চেয়ে টাক ঢাকার জন্যই বেশি উদ্বিগ্ন। হাইতিং বলেন, ‘আমি আমার নেতাকে সাদা চুলে দেখতে চাইব না। এটা তাঁকে বুড়ো দেখাবে। মনে হবে, তিনি শিগগির মরতে যাচ্ছেন। তাই চীনা নেতাদের চুল কালো করাটা ফ্যাশন নয়। এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু।’ ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের স্কুল অব কনটেমপোরারি চায়নিজ স্টাডিজের শিক্ষক বলেন, ‘একই পোশাক পরা, দেখতেও একই লাগা এবং দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা— এসব সম্ভব হলে আপনি কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবেন।’ বিবিসি।প্রথম আলো