যন্ত্রে পাঠযোগ্য বই (ই-বুক) এবং ইন্টারনেটের দাপটে কাগজে ছাপা বইয়ের ব্যবসা অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। অনেক প্রকাশক মনে করছেন, বই বিপণনের প্রথাগত পদ্ধতি এখন আর ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিক্রি হ্রাসের অজুহাতে তাঁরা বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন লেখকদের। এতে বিরক্ত হয়ে নতুন লেখকদের অনেকে এখন নিজেরা ই-বুক প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। পোড়ামাটির ফলক, প্যাপিরাস এবং পশুর চামড়ার মতোই প্রকাশমাধ্যম হিসেবে বিলুপ্ত হতে চলেছে কাগজে ছাপা বইয়ের প্রচলন। বই ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিরা এমনই আশঙ্কা করছেন। তবে ই-বুক বা ছাপা বই—যে মাধ্যমেই হোক না কেন, একজন নতুন লেখকের জন্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। যুক্তরাজ্যের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাবেক প্রধান ও লেখক রবিন ডুভাল নিজেই এখন বই প্রকাশ করেন। একাধিক প্রকাশকের কাছে বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি নিজের লেখার মান নিয়ে সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। এরপর নিজ খরচেই ১০০ কপি বই প্রকাশ করেন। বিক্রি নিয়ে উচ্চাশা নয়, তিনি কেবল বইটির কাজ ভালোভাবে শেষ করতে চেয়েছিলেন। তবে আমাজানসহ কয়েকটি দোকানে বইটির কাটতি মন্দ হয়নি। ডুভাল বলেন, আগে বই প্রকাশ ও বিপণনের বিষয়টি লেখার চেয়ে কম কঠিন ছিল না। এখন ইন্টারনেটে নিজের বই প্রকাশের পাশাপাশি অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্লগে প্রচারও চালানো যায়। তবে সমস্যা হলো, ইন্টারনেটে প্রকাশিত বই মানুষের মধ্যে তুলনামূলক কম সাড়া ফেলে। তাঁর প্রথম বই বিয়ার ইন দ্য উডস ই-বুক আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে নিজ উদ্যোগে একটি বইয়ের ৫০০ কপি ছাপাতে খরচ পড়ে প্রায় তিন হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া বিপণনের জন্য খরচ পড়ে আরও প্রায় এক হাজার ১০০ ডলার। দেশটির শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ট্রুব্যাডরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেরেমি থম্পসন বলেন, লেখকদের নিজ উদ্যোগে বই প্রকাশের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে অনেক লেখকই এখন আর প্রকাশকের প্রয়োজন বোধ করেন না। নিজ উদ্যোগে বই প্রকাশের বিষয়টিকে আগে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হলেও এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রকাশনা সংস্থা হার্পারকলিন্সের প্রধান নির্বাহী ভিক্টোরিয়া বার্নসলে বলেন, এখন লেখকদের নিজ উদ্যোগে প্রকাশিত বইগুলো ইন্টারনেটে দেখে মানসম্মত ও জনপ্রিয় লেখা বাছাই করে ছাপানোর সুযোগ বেড়েছে। প্রকাশকেরা এখন পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছে। এ জন্য আগে নির্ভর করতে হতো খুচরা বিক্রেতাদের ওপর। তবে অনেকের কাছেই ছাপা বইয়ের আলাদা কদর রয়েছে। কারণ, এটি হাতে নিয়ে দেখা যায় এবং তাকে সাজিয়েও রাখা যায়। বিবিসি।প্রথম আলো