অনলাইন ডেস্ক : কাজ করতে চাইলে সন্তানের কথা ভুলে যেতে হবে। মনপ্রাণ ঢেলে দিতে হবে কোম্পানিকে। কিন্তু আমি তা পারিনি। এটি অসম্ভব।’ একই সঙ্গে ঘরসংসার আর অফিস সামলানোর পীড়নকর অভিজ্ঞতার কথা এভাবে বর্ণনা করেন জাপানি নারী নোবুকো ইতো। দোটানায় পড়ে এই আইনজীবী একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠানের কাজ ছেড়ে ফিরে এসেছেন ঘরে। এখন সন্তানদের আগলে রেখে তবেই মন দিচ্ছেন পেশাগত কাজে। আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জাপানের শিক্ষিত নারী সমাজের এই বিড়ম্বনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নোবুকোর মতো বর্তমানে জাপানের উচ্চশিক্ষিত নারীদের ৭০ শতাংশ সন্তান জন্ম দেওয়ার পর বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়ছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। গত ১০ বছরে চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে দেখা গেছে। কিন্তু যেসব নারীর সন্তান আছে, তাঁদের জন্য একটি ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন। অন্যদিকে, নারীদের এই চাকরি ছাড়ার পেছনে অন্যতম আরেকটি কারণ হলো স্বামীদের অসহযোগিতা। যখন বাড়ির কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করার বিষয়টি আসে, স্বামীরা তখন পিছু হটেন। এক জরিপে দেখা গেছে, সুইডেন, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে স্বামীরা দিনে তিন ঘণ্টা তাঁদের সন্তানদের সময় দেন এবং ঘরের কাজে ব্যয় করেন। কিন্তু জাপানে এর উল্টো দৃশ্য দেখা যায়। সেখানকার স্বামীরা বড় জোর এক ঘণ্টা সময় দেন ঘর-গৃহস্থালির কাজে। সন্তানদের সময় দেন মাত্র ১৫ মিনিট। জাপানে পিতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও মাত্র ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ পুরুষ এ সুবিধা নেন। আইনজীবী নোবুকো জানান, ‘সন্তান হওয়ার সময় আমার স্বামী পিতৃত্বকালীন ছুটি নেননি। জাপানের বেশির ভাগ স্বামী এই ছুটি নিতে দ্বিধাবোধ করেন। তাঁরা একবার ভাবেন, যাই ছুটি নিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করি, আবার ভাবেন, চাকরির ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম না করলে তো পদোন্নতি হবে না। এমনকি চাকরিও খোয়া যেতে পারে।’ এত সমস্যা থাকার পরও অনেক জাপানি নারী চাকরি করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সবচেয়ে বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় সন্তানদের দেখভাল। সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, টোকিওতে দিবাযত্নকেন্দ্রগুলোতে অপেক্ষমাণ তালিকায় ২০ হাজার শিশু রয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে এসব কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়া গেলেও ব্যয় খুব বেশি। নোবুকো বলেন, ‘আমাকে প্রতি মাসে প্রত্যেক সন্তানের জন্য এক হাজার ডলার গুনতে হয়। আর বেসরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রে এই খরচ দ্বিগুণ।’ জাপানে এখন এমন বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, একদল নারী সন্তান থাকায় চাকরি করছেন না, আরেক দল চাকরি করায় সন্তান নিচ্ছেন না। দুটিই জাপানের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ। জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ ক্যাথি মাতসুই তাঁর যুগান্তকারী কর্ম ‘ওমেনোমিকস: জাপানস হিডেন অ্যাসেট’-এ উল্লেখ করেছেন, জাপানে চাকরির বাজারে মায়েদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা বা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে ‘জাতীয় ভিত্তিতে অগ্রাধিকার’ দিতে হবে। তিনি বলেন, চাকরিজীবী মায়েরা মোট দেশজ উত্পাদনে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ করতে পারেন।প্রথম আলো