প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ১:১১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ৯, ২০১৩, ৩:৪৯ পি.এম
থ্যাচারের প্রতি বিশ্বনেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন : একমাত্র নেতা যিনি পুরো প্রজন্মকে এক সুতোয় গেঁথে গেছেন
![]()

বিবিসি, রয়টার্স : গভীর শোক, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিশ্বনেতারা স্মরণ করছেন প্রয়াত লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচারকে। গতকাল ৮৭ বছর বয়সে ব্রিটেনের প্রথম ও একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার মারা যান। এরপর থেকেই বিশ্বজুড়ে শোক নেমে আসে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটার বার্তায় বলেন, থ্যাচার সর্বকালের সেরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। আর বারাক ওবামা থ্যাচারকে অভিহিত করেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সেরা যোদ্ধা হিসেবে। এদিকে আগামী সপ্তাহে থ্যাচারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হওয়ার কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, লন্ডনের সেন্ট পলের ক্যাথেড্রালে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। একাধারে তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করে থ্যাচার ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সোমবার অনেকটা নীরবেই লন্ডনের রিজ হোটেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের রোগে (স্ট্রোকে) তিনি মারা যান। থ্যাচার যখন মারা যান তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপ সফরে ছিলেন। থ্যাচারের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি সফরের মাঝখানেই লন্ডনে ফিরে আসেন। ক্যামেরন থ্যাচারকে দেশপ্রেমিক ও শান্তিপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, তিনি ব্রিটেনকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন। ক্যামেরন আরও বলেন, থ্যাচার দেশকে ভালোবেসে সাধ্যমত সেবা দিয়ে গেছেন। তাই তো তিনি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্রিটিশরা তাকে পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে। এছাড়া থ্যাচারের উত্তরসূরি স্যার জন মেজর, টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। লেবার পার্টির নেতা এডওয়ার্ড মিলিব্যান্ড বলেন, থ্যাচার একমাত্র নেতা যিনি পুরো প্রজন্মকে এক সুতোয় গেঁথে গেছেন। কিন্তু লেবার পার্টির সাবেক নেতা লর্ড নিকক তার গৃহীত অথনৈতিক নীতি ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ ছিল বলে সমালোচনা করেন। বারাক ওবামা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমেরিকা তার একজন প্রকৃত বন্ধুকে হারিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেন, ইউরোপ ভাগ ও স্নায়ুযুদ্ধে তার অবস্থান আমি কোনোদিনই ভুলব না। বিবিসির পলিটিক্যাল এডিটর নিক রবিনসন বলেন, থ্যাচার আজীবনই বিভক্ত রাজনীতিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তারপরও তার আপসহীন ও কর্মস্পৃহা সমালোচকদের অনুপ্রাণিত করবে। ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে দল ক্ষমতায় এলে থ্যাচার হন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ও সেবা খাতগুলোর বেসরকারিকরণের, শ্রমিক ইউনিয়ন সংশোধনের, কর কমানোর এবং দেশজুড়ে সামাজিক খাতগুলোতে ব্যয় কমানোর পক্ষে কাজ করেছেন। থ্যাচারের গৃহীত নীতিমালা যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সফল হলেও তার ক্ষমতার মেয়াদে বেকারত্ব ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। তার এই নীতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ‘নয়া-উদারবাদী’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮২ সালের বহুল আলোচিত ফকল্যান্ড যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের বিজয় ও দেশের বিভক্ত বিরোধী দল ১৯৮৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে থ্যাচারকে নিরঙ্কুশ জয় পেতে সাহায্য করেছিল। ১৯৮৪ সালে ব্রাইটনে দলের সম্মেলনে আইরিশ রেভুলিউশনারি আর্মির বোমা হামলায় তিনি একটুর জন্য মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যান। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সাম্যবাদের প্রতি সাধারণ অবিশ্বাস ও মুক্তবাজার অর্থনীতির আদর্শকে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক রেখে গেছেন তিনি। রাশিয়ার সংশোধনবাদী নেতা মিখাইল গর্বাচেভের সঙ্গেও উষ্ণ সম্পর্ক ছিল তার। ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে থ্যাচার অভূতপূর্বভাবে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচনী করারোপসহ তার বিভিন্ন বিতর্কিত নীতি ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাবিরোধী নীতির কারণে তার দলে বিভাজন তৈরি হয়, যা থেকে তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ১৯৯০ সালের নভেম্বরে তিনি পদত্যাগ করতে সম্মত হন এবং তার জায়গায় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হন জন মেজর। যুক্তরাজ্যে থ্যাচারের মতো এতদিন কেউ প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন না। ১৯৯২ সালে হাউস অব কমন্স ছেড়ে যান থ্যাচার। তিনি কেস্তেভানের ব্যারোনেস থ্যাচার উপাধিসহ হাউস অব লর্ডসে ‘পিরেজ’ হিসেবে নিয়োগ পান এবং বিশ্বজুড়ে বক্তব্য ও ভাষণ দিয়ে বেড়ান। তিনি থ্যাচার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অগ্রগতি, বিশেষ করে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের সদ্য স্বাধীন দেশগুলোর উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা। থ্যাচার ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ডের নাইটহুডের সর্বোচ্চ পর্যায় অর্ডার অব দ্য গার্টারের সদস্য হন।আমার দেশ
Copyright © 2025 USA NEWS ONLINE. All rights reserved. Developed by TEKSERV.