ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর স্বৈরাচার সরকারের পতনের প্রতিষ্ঠিত বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হলো নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে রোববার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির কিউ গার্ডেনের আগ্রা প্যালেসে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক, ক্লাব সদস্য আর কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো শুভেচ্ছা বিনিময়, ক্লাবের নতুন সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ, সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, সঙ্গীত আর নৈশভোজ। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মু. ফখরুল ইসলাম মাসুম। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর বিশ্বে নিহত সকল সাংবাদিকদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদ এ খান। পরবর্তীতে ক্লাবের নতুন উপদেষ্টামন্ডলী ও নতুন সদস্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেন ক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সাবেক সভাপতি আবু তাহের ও ডা. ওয়াজেদ এ খান, সিনিয়র সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন, ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম মজুমদারসহ কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
এরপর ক্লাবের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্য থেকে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা মনজুর আহমদ, মাঈনুদ্দীন নাসের, মাহমুদ খান তাসের ও এবিএম সালেউদ্দিন, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি আবু তাহের, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সহ সভাপতি রিমন ইসলাম, ক্লাব সদস্য ড. কনক সারোয়ার, ইমরান আনসারী, ফরিদ আলম ও শেখ খোরাশান এবং নতুন সদস্যদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ইলিয়াস হোসেন।
এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবু জাফর মাহমুদ, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ, কুইন্স ডেমোক্র্যাট পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লীডার এট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, অ্যাসাল-এর ন্যাশনাল সভাপতি মাফ মিসবাহ উদ্দিন, ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ খ্যাত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বেবী নাজনীন, যমুনা টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ তুহিন, বিশিষ্ট রাজনীতিক এএসএম রহমতউল্লাহ ভূইয়া, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ‘রুহুল-জাহিদ’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী রুহুল আমীন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জাহিদ মিন্টু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আলমগীর হোসেন সরকার ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য রওশন হক।
স্বাগত বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদ এ খান ক্লাব প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূরধা, ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মরহুম ফাজলে রশীদকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে ক্লাব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত পোশাজীবি সাংবাদিকদের প্রাণের সংগঠন। সাংবাদিকতার গুণগত মানোন্নয়ন, সাংবাদিকদের মাঝে পারষ্পারিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, প্রেসক্লাব সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকতার জগতে হয়তো কোন পরিবর্তণ আনতে পারবে না। কিন্তু সমাজ ও সভ্যতায় পরিবর্তনের কারিগরের ভূমিকা পালনকারী সাংবাদিকদের কাতারে শামিল হয়ে সংগঠনটি এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সকল সাংবাদিকের আদর্শ ও উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। সাংবাদিকেদের মাঝে প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে তা হবে সুস্থ, সুন্দর এবং সৃজনশীল। এটাই হোক নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূলমন্ত্র।’
প্রসঙ্গত ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্বর্তী সরকার প্রধান, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একসময় নিউইয়র্ক সফরকালীন সময়ে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্ব করতে পারি। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সকল দল ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পেশাদার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ক্লাবের সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে কোন কোন বক্তা আতœসমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ায় প্রবাস থেকে ভূমিকা রাখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান। বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরাও রাজনীতির উর্দ্বে নন, কিন্তু ‘দলকানা সাংবাদিকতা’ দেশ-জাতি আর রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। তাই দেশ ও প্রবাসের সাংবাদিকদের রাজনীতিমুক্ত থাকাই শ্রেয়।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক নিউইয়র্ক সময় সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকো, সাপ্তাহিক রানা’র সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য সাঈদ তারেক, জয়বাংলা টিভি’র আদিত্য শাহীন, সাপ্তাহিক সাদা-কালো’র নির্বাহী সম্পাদক আবুল কাশেম, সাংবাদিক সৌরভ ইমাম, বাংলাদেশী-আমেরিকান এডভোকেসী গ্রুপ (বাগ)-এর সভাপতি জয়নাল আবেদীন ছাড়াও আজিজুল হক, আব্দুল হামিদ সোহেল, আব্দুস সাত্তার, আমিন খান মেহেদী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রকি আলিয়ান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট দেলোয়ার হোসেন শিপন, দেওয়ান কাউসার, মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রেসক্লাবের সদস্যরা সপরিবারে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে এককভাবে মনোমুদ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী মারিয়া মরিয়ম।
উল্লেখ্য, ক্লাবের নতুন সদস্যরা হলেন: ইলিয়াস হোসাইন (ইটিভি), ইকবাল মাহমুদ (টাইম টিভি), মুশফিকুর রহমান অন্তু (জেটিভি), মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন (টাইম টিভি), হুমায়ুন কবীর (টাইম টিভি), ফাহমিদা আলম লিনা (আইবি টিভি), আবু সায়েম (সাপ্তাহিক আজকাল) এবং অপূর্ব বাবু (আইটিবি টিভি)।
অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ রশীদ আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাহাথীর খান ফারুকী, কার্যকরী সদস্য এস এম জাহিদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।