ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে ৯ আগস্ট শুক্রবার বিকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে এবং ম্যানহাটনের টাইম স্কয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক এই হামলার প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন।
ইউনাইটেড হিন্দুজ অব ইউএসএ’র বিকাল ৩টায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ৪৭ স্ট্রিটে দাগ দ্য হ্যামারশেল্ড পার্কে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অবিলম্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধ এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধের জন্য। অন্যথায় নিউইয়র্কে শুরু এ আন্দোলন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
একই আহবানে ইউনাইটেড হিন্দুজ অব ইউএসএ’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর দেশ ছাড়ার সাথে সাথে সুপরিকল্পিতভাবে সারা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। আগুন দেয়া হয় ব্যবসা-বাড়ি ঘরে। ভেঙে চুরমার করা হয়েছে মন্দির। তরুণী-নারীর সভ্রমহানীর পর অনেককে হত্যা এবং মোটা অংকের চাঁদা না দেয়ার অনেক হিন্দুকে অকথ্য নির্যাতনের পর পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এ বিক্ষোভ-সমাবেশে শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীরাও ছিল ক্ষুব্ধ। চোখে মুখে এক ধরনের ঘৃণা পরিলক্ষিত হয়েছে বাংলাদেশে চলমান হিন্দু নিধনের বিরুদ্ধে। সেভ হিন্দুজ ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ করুন, সেভ হিন্দু টেম্পল, উই নীড জাস্টিস, স্টপ রেপস অ্যান্ড সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট হিন্দু উইমেন, স্টপ হিন্দু জেনোসাইড ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ডও বহন করেন অনেকে। ইউনাইটেড হিন্দুজ অব ইউএসএ আয়োজিত এ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. প্রভাত দাস, সভাপতি ভজন সরকার, শীতাংশু গুহ, ড. দীলিপ নাথ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অধ্যাপক ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, সুশীল সাহা, সুশীল সিনহা প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাম দাস ঘরামী।
ইউনাইটেড হিন্দুজ অব ইউএসএ’র সেক্রেটারি রামদাস ঘরামির সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি ভজন সরকার বলেন, বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণকারী সকল স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি আমরা হিন্দুরা কি অপরাধ করলাম। বারবার সরকার পরিবর্তন হয়, নির্বাচন আসে, পূজা আসে, আর হিন্দুদের ওপর হামলা হয়। পূজা পার্বনের সময়েও হিন্দুরা আক্রান্ত হয়। এই সমস্যার একটা পারমানেন্ট সমাধান দরকার। এহেন সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে ৫-১০টি ডিস্ট্রিক্ট নিয়ে সুরক্ষিত একটি আলাদা জায়গা চাই হিন্দুদের জন্যে। সমাবেশে বক্তারা নিজ নিজ বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে হিন্দু নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এদিকে এই সমাবেশ শেষে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি টাইমস স্কয়ারে গিয়ে আরেকটি সমাবেশে যোগ দেয়। সেখানে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং হামলা বন্ধের দাবিতে গত ১১ আগস্ট রোববার বিকালে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় ইউনাইটেড হিন্দজ ইউএসএ’র এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের বিপুলসংখ্যক সদস্য এই সমাবেশে যোগ দেন।