Monday - May 5, 2025 8:10 AM

Recent News

নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলি হাউসে ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপন (ভিডিও সহ)

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলি হাউসে গত ২৮ এপ্রিল সোমবার ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপিত হয়েছে। নবমবারের মতো সোমবার নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয় “বাংলাদেশ ডে” হিসেবে। নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলি ও স্টেট সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ওপর পৃথকভাবে রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়। তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
সোমবার সকাল ৯টায় ব্রঙ্কসের ইউনিয়নপোর্ট রোড এলাকার ফ্যামিলি ফার্মেসি/গোল্ডেন প্যালেস/খলিল বিরিয়ানী হাউসের সামনে থেকে নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীর উদ্দেশ্যে দু’টি বাস ছেড়ে যায়। বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ আলবানিতে পৌঁছান দুপুর প্রায় ১টায়। এসময় আলবানি সিনেট ভবনের তৃতীয় ফ্লোরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা, ন্যাথালিয়া ফার্নান্ডেজ, অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যারীনেস রেইস।
ইভেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শামীম মিয়ার সঞ্চালনায় এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, ইভেন্ট কমিটির কনভেনার আব্দুল হাসিম হাসনু ও আবদুর রহিম বাদশা, মেম্বার সেক্রেটারী এইচ এম ইকবাল, সমন্বয়কারী এ ইসলাম মামুন, অর্থ সম্পাদক সামাদ মিয়া জাকারিয়া ও নুরুল ইসলাম। আরো বক্তব্য দেন শেখ আল মামুন, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, মো. এস আলী, রোকন হাকিম, সায়দুর রহমান লিংকন, সাখাওয়াত আলী, সালেহ উদ্দিন প্রমুখ।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর এ্যাসেম্বলী ও সিনেট অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ ডে’ রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়। আলোচনা শেষে রেজুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। স্টেট সিনেটর ও এসেম্বেলীম্যানগণ এসময় তাদের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশী কমিউনিটির অবদানেরও উচ্ছ্বসিত প্রসংশা করেন।
বাংলাদেশ ডে রেজুলেশন গ্রহণকালে সিনেট ফ্লোরে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী কমিউনিটির আব্দুস শহীদ, আবদুর রহিম বাদশা, আব্দুল হাসিম হাসনু, শামীম আহমেদ, বিলাল ইসলাম, মো. এস আলী, নুরুল ইসলাম ও সালেহ উদ্দিন। অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশীরা সিনেট কক্ষের গ্যালারীতে উপবিষ্ট ছিলেন।
বাংলাদেশ ডে রেজুলেশন গ্রহণকালে এ্যাসেম্বলী ফ্লোরে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী কমিউনিটির আব্দুস শহীদ, শামীম আহমেদ, বিলাল ইসলাম, সামাদ মিয়া জাকারিয়া, এ ইসলাম মামুন, মো. এস আলী, নুরুল ইসলাম এবং সালেহ উদ্দিন। অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশীরা হাউজ কক্ষের গ্যালারীতে উপবিষ্ট ছিলেন।
সবশেষে সিনেট ভবনের লবির বাইরে বাংলাদেশ ডে উদযাপনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ফটোসেশন অনুষ্ঠিত হয়। ফটোসেশনে সিনেট মেজরিটি লিডার আন্দ্রেয় স্টিওয়ার্থ কোজিন, ব্রঙ্কস থেকে নির্বাচিত দুই স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা ও ন্যাথালিয়া ফার্নান্ডেজও অংশ নেন।
ব্রঙ্কস বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়োজিত এ অনুষ্ঠান বাস্তবায় করার লক্ষে ইতোপূর্বে ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কর্মকর্তারা হলেন : চেয়ারম্যান আবদুস শহীদ, কনভেনার আব্দুল হাসিম হাসনু ও আবদুর রহিম বাদশা, মেম্বার সেক্রেটারী এইচ এম ইকবাল ও মো. শামীম মিয়া, প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ এন মজুমদার, সমন্বয়কারী এ ইসলাম মামুন ও শেখ জামাল হুসেন, অর্থ সম্পাদক সামাদ মিয়া জাকারিয়া ও নুরুল ইসলাম। এছাড়া একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়।
সহযোগিতায় ছিলেন আতাউর রহমান সেলিম, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, খলিলুর রহমান, সালেহ উদ্দিন, মো. এস আলী, স্বপন তালুকদার এবং প্রিন্স রহমান। সার্বিক সহযোগিতায় আরো ছিলেন রোকন হাকিম, মামুন’স টিউটরিয়াল, আব্দুর রব দলা মিয়া, এক্সিট রিয়েলটি-সায়দুর রহমান লিংকন, আল আকসা রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারী, এবং সাখাওয়াত আলী। অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য জনপ্রতি ফি ধরা হয় ৫০ ডলার।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ঐতিহাসিক বাংলাদেশ ডে বিলটি পাশ হয় ২০১২ সালের ২৪ মার্চ। ব্রঙ্কস থেকে নির্বাচিত সাবেক সিনেটর রুবিন ডিয়াজের ধন্যবাদ প্রস্তাব বিলের মাধ্যমে বিলটি পাশ হয়। তাকে রেজুলেশন তৈরি করে সহযোগীতা করেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে ‘লুইস ভাই’ হিসেবে পরিচিত এটর্নী লুইস সিপুলভেদা (বর্তমান সিনেটর)। তাদের সহযোগীতা করেন ব্রঙ্কস বাংলাদেশী কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দ।
জানা যায়, রুবিন ডিয়াজ ও লুইস সিপুলভেদা বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে ও একসাথে কাজ করার বিষয়ে প্রয়াত কমিউনিটি সংগঠক জাকির খানের কাছে আগ্রহ ব্যাক্ত করেন। বাংলাদেশ কমিউনিটিকে নিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠান করতে চান যার ফান্ডিং তারা বহন করবেন। জাকির খান তাদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটাতে কমিউনিটির অনেকের সাথে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে লুইস সিপুলভেদা এবং জাকির খানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ এন মজুমদারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশের ৪১ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বিষয়ে এক সভার আয়োজন করা হয় ব্রঙ্কসের একটি রেষ্টুরেন্টে। ওই সভায় বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের ততকালীন সভাপতি মাহবুব আলমের প্রস্তাবনায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে ২০১২ সালের ২৪ মার্চ নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ততকালীন সিনেটর রুবিন ডিয়াজ বাংলাদেশ ডে বিলটি উত্থাপন করেন। বিলের আলোকে সিনেটর রুবিন ডিয়াজ সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বাংলাদেশীদের আত্মত্যাগ এবং পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন। সেদিন মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই এই ঐতিহাসিক বিলটি সর্বসম্মতভাবে সিনেটে পাশ হয়। সেথেকে প্রতি বছর দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ডে রেজ্যুলেশন প্রস্তুতকারী এটর্নী লুইস সিপুলভেদা (বর্তমান সিনেটর) এসেম্বলিম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আলবেনীতে বাংলাদেশ ডে উদযাপনে আরো ব্যাপকতা পায়। ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপনের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ এন মজুমদার এবং মেম্বার সেক্রেটারী ছিলেন মরহুম জাকির খান।

16Shares