Thursday - January 9, 2025 4:13 PM

Recent News

নিউইয়র্কে ‘বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ’র এক লাখ করব প্রজেক্ট ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র জমি ক্রয় সম্পন্ন (ভিডিও সহ)

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীদের সামাতিক সংগঠন ‘বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ’র ইতিহাসে বৃহত্তম প্রজেক্ট ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র জমি ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। চলছে পরবর্তী কর্মকান্ডের সাথে বিশেষ ডিসকাউন্টে কবর ক্রয়। নিউইয়র্কের আপ স্টেটের মিডলটাউনে এক শত ২৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’ অর্থাৎ মুসলিম গোরস্তান। এছাড়াও সোসাইটির নতুন ও পঞ্চম প্রজেক্ট নেয়া হচ্ছে শীঘ্রই। এই প্রজেক্ট হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য ‘বাংলাদেশ কমপ্লেক্স’। অতীতের মত আগামীতে সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এই প্রজেক্টও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। খবর ইউএনএ’র।
জ্যাকসন হাইটসের মুন লাইট পার্টি হলে শনিবার (৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত তথ্য জানানো হয়। বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ’র সভাপতি নাজমুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রজেক্টের সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু। এসময় সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’ প্রজেক্ট গ্রহণ করে সংগঠনটি কমিউনিটিতে ইতিহাস রচনা করলো। কেননা কমিউনিটির অন্য কোন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে এতো বড় কোন কবর স্থান প্রজেক্ট আর কারো নেই। যদিও বাংলাদেশ সোসাইটি, জালালাবাদ এসোসিয়েশন, বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ প্রভৃতি সংগঠনের নিউইযর্ক/নিউজার্সীতে ‘কবর স্থান’ প্রজেক্ট রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ মিন্টু তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত বছর গ্রীষ্মের সময় আমরা বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েছিলাম- ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র। আমরা কমিউনিটির সকল প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং মসজিদের ইমামদের নিয়ে গুলশান টেরেসে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলাম। সেই মতবিনিমিয় সভায় আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম আপ স্টেটের মিডলটাউনে এক শত ২৬ একর জমির উপর মুসলিম গোরস্তান করার। নিউইয়র্কের ব্রুকলীন থেকে প্রায় ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট দূরত্বের এই সেমিট্রিতে প্রায় এক লাখ করব তৈরি করা যাবে। জ্যাকসন হাইটস থেকে দূরত্ব হচ্ছে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। সেই সময় আমরা জমির মালিকের সাথে আইনজীবীর মাধ্যমে চুক্তি করেছিলাম। চুক্তির পূর্বে আমরা মাটি-পানিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করি। চুক্তির পরও অনেক কাজ ছিলো। নিশ্চয়তা ছিলো না চূড়ান্তভাবে আমরা এই জায়গা কবরের জন্য অনুমোদন পাবো কি না। কারণ এখানে স্থানীয় কম্যুনিটি বোর্ডের মতামতের বিষয় ছিলো। আপনাদের সকলের সহযোগিতা এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে সকল বাধা অতিক্রম করে গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে আমরা পুরো ক্যাশ দিয়ে এই জমি ক্রয় করি। এই সময় উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ’র সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, প্রজেক্টের সদস্য সচিব জাহিদ মিন্টু, সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহ আলম, বেলাল হোসাইন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোকন মোশাররফ ও কার্যকরি কমিটির সহ সভাপতি তাজু মিয়া। নিউইয়র্র্কের আপ ষ্টেটের মিডল টাউনে অবস্থিত এই সেমিট্রির নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’, যার ঠিকানা হলো: 247 Connors Road. Scotchtown, NY 10941, Phone no: 845-879-5900, 845-953-1111, 917-487-2978, Email: [email protected]
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় যে, প্রজেক্টটি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ল’ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রজেক্টের জন্য আলাদা কমিটি এবং আলাদা কর্পোরেশন করা হয়েছে। যদিও মাদার সংগঠন হিসাবে থাকবে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ। এই প্রজেক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে এক সভায় মিলিত হয়েছেন। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী মার্চ ২০২৫ সাল থেকে ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করা হবে। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হবে অফিস। এই প্রজেক্টে আরো থাকবে ফিউনারেল হোম ও দুর দৃরাত্ব যাওয়া মুসল্লিদের (পুরুষ ও মহিলা) জন্য পৃথক অজুখানা, বাথরুম ও নামাজের স্থান। আগামী মার্চ ২০২৫ সাল থেকে কাজ শুরু করতে আমাদের বেশ মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন। আমরা কর্জে হাসানা পরিশোধ করতে চাই। প্রজেক্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমে আমরা বিশেষ ডিসকাউন্টে ৫ হাজার কবর বিক্রি করতে চাই। আগামী ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত এই বিশেষ ডিসকাউন্টের সুযোগ থাকবে। এই ৫ হাজার কবর প্রতিটি ৭ শত ডলারে বিক্রি করা হবে। তবে কবরের সংখ্যা ৫ শতাধিক হতে হবে। এর নিচে হলে প্রতি কবর ৮ শত ডলার বিক্রি করা হবে। এই ৫ হাজার কবরের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোসাইটি, ব্রুকলীন নিউকার্ক বেলাল মসজিদ, বায়তুস শরফ মসজিদসহ কয়েকটি মসজিদ ও সংগঠনের প্রতিশ্রুতির ফলে ৫ হাজার কবরের মধ্যে ২ হাজার কবর বিক্রি হয়েছে। আর বাকি রয়েছে প্রথম কিস্তির মাত্র ৩ হাজার কবর। এই কবর বিক্রির পর আমাদের কমিটি আবারো সভায় বসবেন এবং দাম নির্ধারণ করবেন।
জাহিদ মিল্টু বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এই বিশাল প্রজেক্ট কমিউনিটির জন্য করতে পেরে। বলা যায়, আমরা সবে মাত্র এই বিশাল কর্মযাজ্ঞের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী এক শত বছরে প্রবাসে মুসলিম কমিউনিটির কবর নিয়ে আর সমস্যা হবে না। সত্যি এটি একটি বিশাল প্রজেক্ট। এই বিশাল কর্মযাজ্ঞে আমরা সবার সহযোগিতা চাই। আমরা কবর বিক্রি শুরু করে দিয়েছি। আগামী মার্চ থেকে কাজ চলবে এবং আশা করি জুলাই থেকেই কবর দেয়া শুরু করা যাবে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় যে, আমরা আনন্দের সাথে জানাতে চাই-এই প্রজেক্টের পাশাপাশি আগামী বছর ‘বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি’ পঞ্চম প্রজেক্টে হাত দিবো ইনশাআল্লাহ। সেই প্রজেক্ট হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটির জন্য ‘বাংলাদেশ কমপ্লেক্স’। অতীতের মত আগামীতে সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আশা করি-এই প্রজেক্টও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এরপর জাহিদ মিন্টু সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় এক প্রশ্নের উত্তরে জাহিদ মিন্টু বলেন, ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’-তে কবর ক্রয় ছাড়া নোয়াখালী সোসাইটির সাথে বাংলাদেশ সোসাইটির সাথে আর্থিক কোন সম্পর্ক নেই। আর ‘বাংলাদেশ কমপ্লেক্স’প্রজেক্ট সম্পূর্ণ নোয়াখালী সোসাইটির প্রজেক্ট, এর সাথে বাংলাদেশ সোসাইটির কোন সম্পর্ক নেই।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যে সংগঠন বা যিনি ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’-তে কবর ক্রয় করবেন তাকে কবরের স্বত্তাধিকারী হিসেবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রদান করা হবে। এবং ‘বাংলাদেশ সেমিট্রি’র সকল ব্যবস্থাপনায় থাকবে পৃথক ব্যবস্থাপনা কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটি ও নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মিয়া ও সাবেক কর্মকর্তা নজির ভান্ডারী সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে উপদেষ্টা শাহ জাহান কবীর, ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজী মফিজুর রহমান, ট্রাষ্টি বোর্ড সদস্য রফিকুল ভূইয়া, আবুল কালাম, খোকন মোশাররফ, রমেশ নাথ, সহ সভাপতি মোহাম্মদ তাজু মিয়া ও আবুল বাসার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালে আহমেদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিরন, সহ কোষাধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আবু মনসুর ছাড়াও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মাইনুল উদ্দিন মাহবুব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

0Shares