নানা সময়ে একতাবদ্ধ হয়ে কত অসম্ভবকেই তো সম্ভব করার কথা আমরা শুনেছি। আর সেই ঐক্যের শক্তিকেই এবার নতুন করে আরও একবার আলোচনায় নিয়ে এলেন জাপানের সাতিয়ামা শহরের একদল ট্রেন যাত্রী। সম্প্রতি ৩২ টন ওজনের একটি ট্রেনকে স্রেফ ঐক্যের শক্তি দিয়েই এরা বেশ খানিকটা উঁচুতে তুলে উদ্ধার করেন আটকে পড়া এক নারী যাত্রীকে। যেখানে এ মাপের কোনো ওজনকে হাইড্রোলিক ক্রেন ছাড়া উত্তোলন করা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় সেখানে ক্ষণিকের সিদ্ধান্তে প্রায় ৪০ জন যাত্রীর ঐক্যই শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচিয়ে দেয় আটকে পড়া ঐ যাত্রীকে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ঘটনার দিন জাপানের রাজধানী টোকিওর উপকণ্ঠে সাতিয়ামা শহরের মিনামি উরওয়া স্টেশনে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে ওঠার সময় ট্রেনের বগি আর প্ল¬াটফর্মের মধ্যবর্তী স্থানে আটকে যান দুর্ঘটনার শিকার ওই নারী। এ সময় নিজে থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও আটক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হন ওই মহিলা। এমনকি তাকে টেনে বের করে আনার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে ক্রেন এনে তাকে উদ্ধার করতে হলে যে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতো তাতে আটকে পড়া ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তা ছাড়া এতে করে ট্রেন চলাচল ব্যবস্থাতেও বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। আর এ কারণেই তাত্ক্ষণিক বুদ্ধি হিসেবে স্টেশনে উপস্থিত যাত্রীদের সহায়তা চেয়ে লাউডস্পিকারে ঘোষণা দেওয়া হয়। সাথে সাথে এগিয়ে আসেন চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জন যাত্রীও। আর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই ট্রেনটিকে একদিকে বেশ খানিকটা কাত করে প্রায় অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আনুমানিক ত্রিশ বছর বয়সী ওই নারীকে। এ সম্পর্কে স্টেশনটির একজন মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, টোকিও ও এর আশপাশের বিভিন্ন শহরে চলাচল করা এই ট্রেনগুলোর সাসপেনশন সিস্টেমটিই (যাত্রীদের ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা করার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) এমন যে সেখানে অনায়াসেই ট্রেনের বগিগুলোকে বেশ অনেকটা কাত করা যায়। আর ট্রেনের বগিগুলোর এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এবং মানুষের ঐক্যের শক্তি দিয়েই সেদিন ৩২ টনের মতো এই বিশাল ওজনের নিচে চাপা পড়া মহিলাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এতে সময়ও লাগে মাত্র আট মিনিট যা টোকিওর ব্যস্ত রেল শিডিউলেও বাড়তি বিঘ্ন তৈরি হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেয় রেল কর্তৃপক্ষকে।ইত্তেফাক