Sunday - November 24, 2024 12:11 PM

Recent News

গণঅভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় নবজাগরণের নাগরিক অভিষেক নিউইয়র্কে : অন্তর্বর্তী সরকারের কারোরই সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই – আবু জাফর মাহমুদ (ভিডিও সহ)

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রথম ও প্রধান কাজ বলে মন্তব্য করেছেন ড. আবু জাফর মাহমুদ। তার মতে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা করা যেতেই পারে কারণ তাদের কারোরই সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই।
তাদেরকে ‘লিডার’ না বলে ‘ডিলার’ বলা যেতে পারে, কারণ তারা চুক্তি করতে দক্ষ। তারা এনজিও পরিচালনা থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকার পরিচালনায় এসেছে। এ অবস্থায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ পুণর্গঠনে সবকিছু ছাপিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী শক্তিশালীকরণ ও তাদের জবাবদিহিতায় আনা সবচেয়ে জরুরি। ২৯ সেপ্টেম্বট রোববার রাতে নিউইয়র্কের গুলশান টেরেসে ‘গণঅভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় নবজাগরণের নাগরিক অভিষেক’ অনুষ্ঠানে এসব বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যৌথভাবে পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস, জয় বাংলাদেশ মিডিয়া , বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার। রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে এই অনুষ্ঠান চলে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। জয় বাংলাদেশ মিডিয়ার সমন্বয়ক সাংবাদিক আদিত্য শাহীনের সঞ্চালনা ও উপস্থাপনায় ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের উন্নয়ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সামিট অফ দ্য ফিউচারের নির্বাহী পরিচালক এএইচএম বজলুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিউইয়র্কের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে ফাহাদ হোসেন, আব্দুল কাদের, জেবি টিভির সাংবাদিক মুশফিকুর রহমান, আওয়াজ বিডি’র প্রধান সম্পাদক শাহ আহমেদ, বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী ও রাজনীতিক আহমেদ শরীফ, পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, এনওয়াই কাগজ সম্পাদক মনওয়ারুল ইসলাম, প্রবাসী চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. আক্তার হাসান, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সাউথ এশিয়ান টাইমস এর সম্পাদক দীপক কুমার আচার্য প্রমুখ। শুরুতে জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় এক তরফা হামলায় শাহাদৎবরণকারী, পঙ্গুত্ববরণকারী ও সাহসী বীর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র জনতার জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টারের খতিব মাওলানা আব্দুস সাদিক। বক্তারা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর বাংলাদেশ পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসর নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকারে গেল দেড় মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেন, কোন পথে এগুচ্ছে বাংলাদেশ তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও করেন। ড. আবু জাফর মাহমুদ মূল বক্তব্যে বলেন, এই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম দরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। রাষ্ট্র নিরাপদ থাকলে বাকি সমস্যাগুলোও সহজে সমাধান সম্ভব। তিনি অনুযোগ করে বলেন, রাষ্ট্র যে এতদিন নিরাপদ ছিল না এটিও বুঝতো না বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ। বাংলাদেশে ভারতীয় এক ব্রিগেড সৈন্য ছিল, এ নিয়ে কোনো মিডিয়া মালিক, প্রেস ক্লাব, সকল গণমাধ্যম সংগঠন তথা কোনো সাংবাদিক কোনোদিন রিপোর্ট করেনি। দেশ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দায়িত্বরত প্রতিরক্ষার কমাণ্ডারবৃন্দ ও আইন শৃংখলার দায়িত্বরত পুলিশ অফিসাররা সকল সুযোগ সুবিধার ভেতরে থেকে দেশের এই নিরাপত্তাহীনতার কথা বেমালুম চেপে ছিল। যুদ্ধ করার পরিবর্তে ওরা ব্যবসা করেছে, ব্যবসার অংশীদার হয়েছে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর দেশে একটি সিভিল গভ:মেন্ট লাগবে, এ জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ডিলার, ডিল করা তারা ভালো বোঝেন। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারে দায়িত্ব পাওয়া এনজিও পরিচালনকারীদের কথা পুণরুচ্চারণ করে বলেন, এনজিওর কাজ রাষ্ট্র পরিচালনা নয়। তাদের কাজ বিদেশি দাতাগোষ্ঠির কাছ থেকে অনুদান নিয়ে আসা। তারা অনুদান নিয়ে এসে বাংলাদেশের জন্য কাজ করবে, রোহিঙ্গাদের জন্য টাকা আনবে; এরও প্রয়োজন আছে। মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জানান, অভ্যুত্থান শব্দটির ব্যপ্তি তার অজানা নয়। তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থান করতে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তি, নেতাদের পাওয়া যায়নি। তারা বেঈমানি করেছে। সেনাবাহিনীর জেনারেলদের পাওয়া যায়নি, তারা বেঈমানি করেছে। পুলিশ বাহিনীকে পাওয়া যায়নি তারাও বেঈমানি করেছে।
কিন্তু তারপরও দেশ রক্ষা করতে হবে। কারণ ওই বেঈমানগুলো আমাদের জাতির, আমাদের পরিচিতজন। তিনি সমালোচনা কিংবা হস্তক্ষেপ না করে সবার নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে আন্ডারমাইন্ড করার সুযোগ নেই। প্রথমদিকে তিনি পদত্যাগ করতেও চেয়েছিলেন। কারণ তিনি কারো আত্মীয়, ডাবল প্রমোশন নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি যখন সুযোগ পেয়েছেন তখন তিনি দেশমুখী হয়েছেন। দেশরক্ষায় প্রকৃত সৈনিকের গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছেন। দেশ বিনির্মাণে সঠিক ভূমিকা রাখছেন। এখন যারা ওয়াকারুজ্জামানের সমালোচনা করছেন তারা অবশ্যই ভারতপন্থী, তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শত্রু ও বাংলাদেশকে জড়িয়ে ‘বাংলা প্রদেশ’ করার ষড়যন্ত্রের অংশীদার। বাংলাদেশের এই প্রথিতযশা মুক্তিযোদ্ধা জানান, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে পূর্ণ সমর্থন দিতে হবে। জাতিসংঘে যে কাজে এসেছিলেন সে কাজটি তিনি করে গেছেন। এই সরকারের অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা আছে, এটি মেনে নিয়েই আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে ভুল করতেই পারে, সে জন্য অস্থির না হয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তিনি পতিত সরকার আমলের কথা তুলে ধরে বলেন, তখন বিরোধী দলের নেতারা কি করেছেন ? তাদের নেতাকর্মীরা জেল খেটেছেন। এতদিন ধরে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে করে । তারা সরকার উৎখাতে ছিল সংকল্পবদ্ধ কিন্তু নেতৃত্বের দ্বিমুখী যাত্রার কারণে তাদের সে সংকল্প দানা বাঁধতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। নেতৃত্ব পালিয়ে যাওয়ার কারণেই এবারের আন্দোলনের ছাত্রজনতার মতো তারা রাস্তায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। কিন্তু তারপরও এই রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েই আমাদের বাংলাদেশ।
তিনি মনে করিয়ে দেন , ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশকে আমরা নিরাপদ রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা যখন জেনেছি, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশকে একত্র করে ‘বাংলা প্রদেশ’ করা হচ্ছে, আর মূখ্যমন্ত্রী হবেন বাংলাদেশ থেকে, এই কথা দেশের মানুষ শুনে অবাক হয়েছেন। শেখ হাসিনা ছদ্মবেশে এখানে যুদ্ধ বাঁধিয়ে জাতিকে বিভক্ত করে উপনিবেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। যেটি কোন গোয়েন্দা সংস্থা, গবেষক, স্কলার, সাংবাদিকরা টের পাননি। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই যে বাংলাদেশ পেয়েছেন এটি কে করে দিয়েছেন ? কারো বাবা-মা ? সেনাবাহিনী ? এটি আসলে ছিল একটি সামরিক যুদ্ধ । বলেন, বাংলাদেশ যে রক্ষা পেলো, যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাদেরকে আপনি কি দিবেন ? তিনি বলেন, ভারত এখনো বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের ডিফেন্স পলিসি পরিবর্তন করেনি। এ অবস্থায় ডক্টর ইউনূসের কাছে বিশ্ব নিরাপত্তা দিতে পারে সেসব দেশের সাথে ডিল করার দাবিটি করা যেতে পারে। তিনি বলেন, তিনি জাতিসংঘে এসে বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে কোন আলোচনা করেছিলেন কিনা আমাদের জানা নেই। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের দেশকে শক্তিশালী করা, সীমান্ত পাহারায় বিডিআরকে আগের জায়গায় নিয়ে আসা। পুলিশ বাহিনী শক্তিশালী করা। একই সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ভারত ডিফেন্স পলিসি না পাল্টালেও আমাদের জোর করে বদলাতে হবে। তিনি গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের মদদপুষ্ট গণমাধ্যমকে আর সুযোগ দেয়া যাবে না। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে ড. আবু জাফর মাহমুদের লিখিত “বাংলাদেশকে ঘিরে পরাশক্তির উত্থান সম্ভাবনা” শীর্ষক প্রামাণ্যিচত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীনের পরিবেশনা। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন নিউইয়র্কের জনপ্রিয় শিল্পী মেহেরুন আহমেদ, তরুণ শিল্পী আলভান ও শিল্পী উম্মে জান্নাতুল ফেরদৌস বাঁধন।

0Shares