ধূমপান মানুষের উদ্বেগ তো কমায়ই না, বরং ধূমপানে উদ্বেগ বাড়ে : লন্ডনের গবেষকদের এক সম্মিলিত সমীক্ষায় প্রমাণ

এমনিতেই ধূমপানের পক্ষে একটি শক্ত যুক্তিও দেওয়া মুশকিল। তার উপর ধূমপানের অপকার নিয়েও হরহামেশাই প্রকাশিত হচ্ছে নিত্য নতুন সব তথ্য। তবে এতো কিছুর পর ধূমপায়ীরা তাদের ধূমপান চালিয়ে যাওয়ার সপক্ষে যে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেন তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি যুক্তি হলো ‘ধূমপান উদ্বেগ বা টেনশন কমায়।’ তবে ধূমপানের সপক্ষে দেওয়া এই খোঁড়া যুক্তিকেও এবার নাকচ করে দিয়েছেন ব্রিটেনের একদল গবেষক। ব্রিটেনের নামকরা দুই বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডও ক্যামব্রিজের গবেষকরা কিংস কলেজ অব লন্ডনের গবেষকদের সাথে এক সম্মিলিত সমীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, ধূমপান মানুষের উদ্বেগ তো কমায়ই না, বরং ধূমপান ছেড়ে দেওয়াই মানুষকে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে অনেকাংশে সহায়তা করে। আর গবেষণার এই ফলটি প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে। এই জার্নালে নিজেদের গবেষণার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করতে যেয়ে গবেষকরা বেশ জোর গলাতেই বলেছেন—’ধূমপান মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এই দাবির কোনো সত্যতাই নেই। বরং এর উল্টোটাই সত্য। কাজেই উদ্বেগ কমাতে ধূমপানের ভূমিকা সম্পর্কে ধূমপায়ীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাদেরকে যতোই ভ্রান্তির মধ্যে রাখুক না কেন আদতে ধূমপান মানুষের উদ্বেগ না কমিয়ে বরং তা বাড়াতেই সাহায্য করে।’ ইংল্যান্ডে ধূমপান নিরোধক ‘এনএইচএস’ ক্লিনিকে আসা মোট ৪৯১ জন ধূমপায়ীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে এদের মধ্যে ১০৬ জন বা ২১.৬ শতাংশ ক্লিনিকে আসার সময় কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন যার মধ্যে মেজাজ হারিয়ে ফেলা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়গুলো ছিল। কিন্তু ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ছয় মাস পর এদের মধ্য থেকে ৬৮ জন ধূমপায়ীর ক্ষেত্রেই (২৪ শতাংশ) উদ্বেগের মাত্রা বেশ অনেকটা কমে গেছে। অন্যদিকে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর আগের মতো বা নতুন মানসিক সমস্যায় ভোগার কথা জানিয়েছেন মাত্র দশ জন। গবেষকরা জানিয়েছেন ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ফলে উদ্বেগ কমার এই হার যার এ কারণেই ধূমপান করতেন তাদের মধ্যেই বেশি। অর্থাত্ যারা উদ্বেগ কমানোর জন্যই ধূমপান করতেন তাদের ক্ষেত্রে ধূমপান ছাড়ার পর উদ্বেগ কমার হার সৌখিন ধূমপায়ীদের চাইতে বেশি। কাজেই ধূমপান করার যুক্তি হিসেবে যারা তাদের মানসিক চাপ কমানোর বিষয়টি উল্লে¬খ করেন এবার বোধকরি তাদেরও ধূমপান ছাড়ার সময় এসেছে।ইত্তেফাক