Thursday - January 30, 2025 1:04 PM

Recent News

নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ব্যস্ততম এলাকাগুলো অনেকটাই ফাঁকা, রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারিতে কাজের লোকের অভাব

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউন শুরুর পর অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিউইয়র্কের ব্যস্ততম অনেক এলাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নথিপত্রহীন অভিবাসীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই কাজে যাচ্ছেন না। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারিতে অভাব দেখা দিয়েছে কাজের লোকের।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা কুইন্স, ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কস বরোর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বিকাল এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন ভিড় থাকতো। কিন্তু ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর এসব এলাকায় আড্ডা অনেকাংশে কমে গেছে। এমনকী এসব এলাকার ফুটপাতে বিভিন্ন দোকানপাট ছিল, তাও আর দেখা যাচ্ছে না।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ এলাকায় সাইডওয়ার্ক দিয়ে হাঁটা যেত না। ফুটপাত ছিল অবৈধ ববসায়ীদের দখলে। পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য থাকতো।এই এলাকার দোকানপাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ছে না।এসব এলাকা এক প্রকার ফাঁকা।
রুজভেল্ট জ্যাকসন হাইটসের একজন ব্যবসায়ী জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তার দোকানে বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জানান, তাদের রেস্টুরেন্টে কর্মীরা গত এক সপ্তাহ ধরে কাজে আসছে না। কেউ ফোনও ধরছে না। সবার ভেতর এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি বলেন, এখন লোকের অভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্রঙ্কসের বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি রেস্টুরেন্টের কর্ণধার নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তার রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ কর্মী বাংলাদেশি স্টুডেন্ট। কিন্তু ধরপাকড়ের খবরে তারা আতঙ্কিত হয়ে আর কাজে আসছেন না।
জ্যামাইকায় বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি গ্রোসারি মালিক জানান, তাদের গ্রোসারিতে ভারী কাজের জন্য স্প্যানিশরা ছিল। কিন্তু ধরপাকড়ের ভয়ে তারা অনুপস্থিত। এ কারণে নিজেই কাজ করছেন।
একটি সূত্র জানায়, গত তিন-চার বছরে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, যাদের বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব নেই। তারা স্বল্প বেতনে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও গ্রোসারিতে কাজ করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার আতঙ্কে তারা নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন। এখন স্টুডেন্ট ভিসায় আগতরাও টার্গেট হয়েছেন। এরই মধ্যে স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে নিয়মিত কাজ করছিলেন। এ ছাড়া পিএইচডি কোর্স করতে ঢাকা থেকে আমেরিকার জেএফএফ এয়ারপোর্টে অবতরণকারী আরেক শিক্ষার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সদুত্তর না পাওয়ায় তার ভিসা বাতিল করে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এমন উদ্বেগজনক তথ্য ২৭ জানুয়ারি এ সংবাদদাতাকে দিয়েছেন আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এবং আমেরিকা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী। তিনি আরও জানান, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে ভিসা গ্রহণের সময় উল্লিখিত তথ্যের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন আমেরিকার জেএফকে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস অফিসার। সঠিক জবাব না পেয়ে এয়ারপোর্ট থেকেই ফেরত পাঠানো হয়। অপরদিকে স্টুডেন্ট ভিসা লঙ্ঘন করে নিয়মিতভাবে কাজ করার তথ্য উদ্ঘাটিত হয় সংশ্লিষ্টদের সেলফোন ট্র্যাকিংয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজের পরিবর্তে ভিন্ন একটি স্থানে প্রতিদিনই দীর্ঘ সময় অবস্থানের তথ্য খতিয়ে দেখার সময় উদ্ঘাটিত হয় ভিসার শর্ত বাতিলের তথ্য। জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় আগত অনেক এশিয়ানই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট কিংবা ট্র্যাভেল এজেন্সি অথবা চিকিৎসকের প্রাইভেট ক্লিনিকে রিসিপশনিস্টের কাজ করছেন। কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করছেন। অবৈধ অভিবাসীদের ধর-পাকড়ের অভিযানে এহেন অপকর্মে লিপ্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরাও ধরা পড়ছেন বলে নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসেচুসেট্স, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান, আরিজোনা থেকে জানা গেছে।
এদিকে নিউইয়র্ক স্যাঙ্কুয়ারি সিটি হলেও অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড় বন্ধ নেই। গত তিন-চার দিনে বিপুলসংখ্যক মাুনষকে সিটির বিভিন্ন বরো থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে নিউইয়র্ক সিটিতে অভিযান পরিচালনার সময় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম উপস্থিত ছিলেন। শনিবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পর নোম মঙ্গলবার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যায় এজেন্টরা নিউইয়র্ক সিটির একটি অজানা স্থানে একজন ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
নোম তার পোস্টে লেখেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই) অভিযান শুরু করেছেন। অপহরণ, হামলা এবং চুরির অভিযোগ থাকা এক অপরাধী বিদেশিকে আটক করা হয়েছে। ধন্যবাদ আইসিই। এ ধরনের অপরাধীদের রাস্তায় আর থাকতে দেওয়া হবে না।’
ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিস জানিয়েছে, তারা নিউইয়র্কের এফবিআই অফিস এবং অন্যান্য ফেডারেল সংস্থার সাথে একত্রে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন বাস্তবায়ন এবং অপরাধী বিদেশিদের সম্প্রদায় থেকে সরিয়ে জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায়’ উন্নত লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান শুরু করেছে।
ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ) সামাজিক মাধ্যমে অভিযানের একটি ছবি শেয়ার করেছে এবং জানিয়েছে যে অভিযানের ফলে অপহরণ, হামলা এবং চুরির অভিযোগে একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।আইসিই প্রতিদিন তাদের গ্রেপ্তার সংখ্যার আপডেট শেয়ার করছে। সোমবার আইসিই ১ হাজার ১৭৯টি গ্রেপ্তার করেছে বলে জানানো হয়েছে।
নোমের নিউ ইয়র্ক সিটিতে উপস্থিতি এজেন্সির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যেই হলো। এজেন্সিটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং গণপ্রত্যাবাসনের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
এদিকে আইসের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস অ্যানফোর্সমেন্ট) উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজের এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার টেক্সাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮৪ জনসহ সারা আমেরিকা থেকে ১ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম ৭ দিনে গ্রেপ্তার হলো ৩৩ অবৈধ অভিবাসী। এরা সবাই নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল এবং সামাজিক শান্তি বিনষ্টের হুমকি বলেই অবৈধদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটে হেকসেথ ফক্স নিউজকে জানান, সোমবার আরও ৪ শতাধিক সৈনিককে টেক্সাসের সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে আগের সপ্তাহের তুলনায় বে-আইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীর সংখ্যা ৯০ ভাগ কমেছে বলেও দাবি করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। আইসের গ্রেপ্তার-অভিযানে সন্ত্রস্ত গোটা কমিউনিটি। জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজোনপার্ক, ব্রুকলিনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত পরিভ্রমণকারে সোমবার বেশির ভাগ রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট, গ্রোসারি স্টোরে গ্রাহকের মতো বিক্রেতার সংখ্যাও নগণ্য মনে হয়েছে। এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিতে। টাইমস স্কোয়ার, ডাউনটাউন, মিডটাউন, আপটাউনের ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জানা গেছে, নিউইয়র্কে ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে ঘণ্টায় ১৭ ডলারের মতো। অবৈধদের দিয়ে সেসব কাজ করিয়ে ঘণ্টায় ৫-৬ ডলার করে দিতে পারায় ব্যবসায় মুনাফা বেশি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। যদিও করোনা মহামারির পর অন্যসব পণ্যের মতো খাদ্য-বস্ত্র-বিনোদনের সব পণ্যের দামও দ্বিগুণ করা হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধদের দিয়ে ব্যবসা চালাতে না পারলে লাভের অঙ্ক অনেক কমবে বলে ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের ওপর নাখোশ। এদিকে গ্রেপ্তারের পরই নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর বিমান ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে ডিটেনশন সেন্টারের ৪১ হাজার শয্যা আগেই পূরণ হয়ে গেছে। এজন্য গ্রেপ্তারের পরই অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার এই কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। উল্লেখ্য, অনেক আগে থেকেই ১৭ লাখের বেশি অভিবাসীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ জারি রয়েছে।
গত সপ্তাহে অফিস গ্রহণের পর থেকে, ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে: শরণার্থী ভর্তি প্রোগ্রাম বন্ধ করা, জন্মগত নাগরিকত্বের সমাপ্তি এবং কিছু কার্টেলকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনোনীত করা।

0Shares