Sunday - December 22, 2024 9:51 PM

Recent News

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনী টুকিটাকি

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউইয়র্ক এর দ্বি-বার্ষিক (২০২৫-২০২৬) নির্বাচন। রোববার (২৭ অক্টোবর) এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠত হয়। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলো সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার ৬১৩ জন। নিউইয়র্ক সিটির ৫টি ভোট কেন্দ্রে ৫৮টি মেশিনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ছোট-খাটো অভিযোগ ছাড়া শান্তিপূনর্ণ পরিবেশ আর দেশীয় স্টাইলে এই নর্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের দিন জ্যামাইকা কেন্দ্রে সকাল ৯টায় প্রথম ভোট দেন প্রবীণ প্রবাসী ছদরুণ নূর। অপরদিকে উডসাইড কেন্দ্রে রাত ৯টার পর শেষ ভোট দেন কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিষ্ট্রিক্ট লীডার এটর্নী মঈন চৌধুরী। খবর ইউএনএ’র।
আবেগ-আপ্লুত ‘সেলিম-আলী’: সোসাইটির নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার আগেই রাত ১০টার দিকে অনেকটা জানাজানি হয়ে যায় রোববারের নির্বাচনে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেল জয়ী হতে চলেছে। এসময় উডসাইড কেন্দ্রে শত শত প্রবাসী অপেক্ষায় চুড়ান্ত ফলাফর ঘোষণা শুনার অপেক্ষায়। একে একে কেন্দ্রের ভিতরে আসলেন সভাপতি পদপ্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম আর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী সহ অন্যান্য প্রার্থীরা। আসলে প্রতিদ্বন্দ্বি সভাপতি পদপ্রার্থী রুহুল আমীন সিদ্দিকীও। ‘সেলিম-আলী’ তার সমর্থকদের সাথে হাত মেলানো, বিজয়ের শুভেচ্ছা বিনিময় আর কোলাকুলি সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। একসময় আতাউর রহমান সেলিমের চোখে খানিকটা জল দেখা যায়।


‘সেলিম-আলী’র আশা পূরণ: অবশেষে আশা পূরণ হলো ‘সেলিম-আলী’র। সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম সোসাইটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন জালালাবাদ এসোসাসিয়েশন অব আমেরিকা আর বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকা’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত। এবার সোসাইটির সভাপতি হতে তিনি নাকি বিগত দু’বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অপর দিকে সোসাইটির সাবেক নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী গত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রুহুল আমীন সিদ্দিকীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তাই এবারের নির্বাচন ছিলো তার জন্য ‘প্রেসটেজিয়াস ইলেকশন’। বিজয়ী মোহাম্মদ আলীও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত।


‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের বিজয়ের নেপথ্যে ছিলেন যারা: ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের বিজয়ের নেপথ্যে থেকে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক লায়ন শাহ নেওয়াজ এবং সদস্য সচিব কাজী তোফায়েল ইসলাম সহ উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও এই প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আজমল হোসেন কুনু, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আজহারুল হক মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সোসাইটির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি কাজী আজম, সন্ধীপ সোসাইটি ইউএসএ’র সভাপতি ফিরোজ আহমেদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার একাংশের সভাপতি বদরুল হোসেন খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম, সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি মকবুল রহিম চনুই, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম অপু, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা ও সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহসান হাবব, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাঈম টুটুল প্রমুখ বলে সংশ্লিস্টরা জানান। এছাড়াও জ্যামাইকা, ওজনপার্ক, ব্রুকলীন এবং ব্রঙ্কস নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমও রয়েছে বলে জানান সংশ্লিস্টরা।
রুহুল আমীন সিদ্দিকীর প্রশংসা: নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার আগ থেকেই উডসাইড কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন ‘রুহুল-জাহিদ’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী এবং সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী। তিনি বসেছিলেন সামনের সারিতে। যখন চারিদিকে ‘সেলিম-আলী’ প্যানেলের জয়জয়কারের আওয়াজ এবং নির্বাচনে ‘সেলিম-আলী’-ই জয়ী হতে চলেছেন- এমনটি টের পেয়ে রুহুল আমীন সিদ্দিকী দ্বিতীয় সারিতে গিয়ে বসেন। এরপর তিনি ফলাফল মেনে নিয়ে এক সাথে কাজ করারও অঙ্গীকার করেন। অপরদিকে আতাউর রহমান সেলিম ও মোহাম্মদ আলীর সাথে কোলাকুলি করেন। সেলিম-রুহুল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ সময় কাটালেন। যা উপস্থিত সকলের কাছে প্রশংসিত হয়। এছাড়াও ফলাফল ঘোষণার শেষ পর্যন্ত রুহুল আমীন সিদ্দিকী সহ তার প্যানেলের ২/৪জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যার জন্য রুহুল আমীন সিদ্দিকী আরো প্রশংসিত হন।
ইসি সদস্যদের বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ: রাত ৯টায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এর প্রয়োজনীয় কর্ম শেষ করে ফলাফল প্রকাশ করতে দুই ঘটনা লেগে যায়। রাত ১১টার দিকে ফল ঘোষণা করা হয়। এর আগে নির্বাচন কমিশনের সদস্যার একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন উপস্থিত শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীরা। পাশাপাশি ফল ঘোষণার সময় এক এক প্রার্থীর ফল ঘোষণার পর পরই বারংবার উপস্থিত প্রবাসীরা উল্লাস প্রকাশ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি নিজেও বিরক্ত হন এবং এক পর্যায়ে প্রয়োজনে ফল ঘোষণা স্থগিত করার ঘোষণা দিলে প্রবাসীরা শান্ত হন।
জ্যামাইকা কেন্দ্রে ঐক্যের ঘোষণা দিলেন ‘আলী-জাহিদ’: রোববার ভোট গ্রহণ চলকালে বেলা আড়াইটার দিকে জ্যাকাইকা কেন্দ্রে মুখোমুখি হন দুই প্যানেলের দুই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী ও জাহিদ মিন্টু। এসময় তারা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় আর হ্যান্ডশেক করেন। তাদের দেখে মিডিয়া কর্মীরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উভয়ে হার-জিত উপক্ষো করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং একে অপরকে আবারো জড়িয়ে ধরেন।
ব্রুকলীন কেন্দ্রে অপ্রীতকর ঘটনা: নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ব্রুকলীন কেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ব্রুকলীন কেন্দ্রে বেলা আড়াইটার দিকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সালেহ আহমেদ মানিক নামের একজন আহত হলে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। মনিক জানান, কে বা কারা অতর্কিতে আমার উপর হামলা করে এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে। তাদের মধ্যে ২/১জনকে আমি চিনতে পেরেছি। কিন্তু কেন আমার ওপর হামলা হলো তা বুঝতে পারিনি। হামলার পর আহত হলে অ্যাম্বুলেস যোগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।
‘গড ফাদার’ মুক্ত হোক সোসাইটি: সোসাইটির নির্বাচনী ফলাফল ঘোষনার পর পরই উডসাইড কেন্দ্রে কেউ কেউ বলে উঠেন ‘গড ফাদার’ মুক্ত হোক সোসাইটি। কেউ কেউ মন্তব্য করেন ‘সেলিম-আলী’ প্যানেল জয়ের মধ্য দিয়ে সোসাইটি ‘গড ফাদার’ মুক্ত হবে। তাহলে প্রশ্ন উঠে আসলেই কি সোসাইটি এতোদিন ‘গড ফাদার’ আবিষ্ট ছিলো। প্রশ্ন কে সেই ‘গড ফাদার’?
১৪৫ টি প্রেস আইডি: বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ‘প্রেস আইডি’ ইস্যূ করেতে হয়েছে নির্বাচন কমিশন-কে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল আহমেদ জনি ফলাফল ঘোষণার আগে জানান নির্বাচন কভার করার জন্য এবার ১৪৫টি ‘প্রেস আইডি’ ইস্যু করেছেন। তার ভাষায় সংশ্লিস্ট মিডিয়া ও সাংবাদিকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করায় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কিন্তু ‘প্রেস মিডিয়া’র এই তালিকার কবথা শুনে সেখানে উপস্থিত পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে কানাঘুষা শুনা যায় যে, এতো মিডিয়া আর এত্তো সাংবাদিক কোথায়? কারা তারা? ইত্যাদি ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। বিব্রতবোধ করলাম আমি নিজেও।

0Shares