বৃটেনে প্রতারণার অভিযোগে ৭ বাংলাদেশীর ২০ বছর কারাদন্ড

তানজির আহমেদ রাসেল, লন্ডন প্রতিনিধি: প্রতারণার মাধ্যমে ২৫০ জন বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টকে ব্রিটিশ সিটিজেনশীপ পাইয়ে দেয়ার অপরাধে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ৭ প্রতারকের ২০ বছরের কারাদন্ড হয়েছে। ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে এই রায় ঘোষণা করা হয়। প্রতারক চক্রের ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্রিটিশ হওয়া ১০ জনকে আটক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকীদের খুঁজছে পুলিশ। ব্রিটেনে বৈধভাবে পাঁচ বছর কাজ করার ডকুমেন্ট তৈরী করে দিতে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার পাউন্ড চার্জ করতো প্রতারক চক্র। বার্কলেস ব্যাংকের একজন কর্মচারী এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার ক্লায়েন্টদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিত। প্রতারক চক্রের মূল হোতা আতাউর রহমান তালুকদার ২০১১ সালে গেপ্তার হওয়ার আগে ৫ বছর যাবত প্রায় ২৫০ জন ইমিগ্যান্টের জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে দিয়েছেন। বিনিময়ে আয় করেছেন কয়েক শ’ হাজার পাউন্ড। হোম অফিসের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা টেইলর জানান, ড্রাগ ডিলারদের চেয়েও বেশী অর্থ উপার্জন করছিলেন তিনি। ভুয়া ব্রিটিশ সিটিজেনশীপ দেয়ার ওই প্যাকেজ বাস্তবায়ন করে দিতে আতাউর রহমান তালুকদার স্থানীয় বার্কলেস ব্যাংকের কর্মচারী হারুন মিয়াকে ভিড়িয়েছিলেন; হারুন মিয়ার কাজ ছিল প্রতারণার মধ্য দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়া। দলে আরও ছিলেন ওল্ডহ্যামের কম্পিউটার স্কিলস এন্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির তৎকালীন চিফ এক্সিকিউটিভ ৪৬ বছর বয়স্ক ওয়াহিদুর রহমান। অবশ্য দোষ স্বীকার করে নেয়ায় তার শাস্তি বাতিল করে দিয়েছে আদালত। প্রতারক চক্রের বাকী চার জনের মধ্যে তিন জন ছিলেন আতাউর রহমান তালুকদারের ভাই।
ছয় মাস স্থায়ী মামলার শুনানীতে জানানো হয়, ব্রিটিশ পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যত রকম ভুয়া কাগজপত্র প্রয়োজন তার সবই প্রতারকরা ১০ থেকে ১৪ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে তৈরী করে দিত। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ব্রিটেনের দূর-দূরান্ত থেকে ওল্ডহ্যামে হারুন মিয়ার শরনাপন্ন হত ক্লায়েন্টরা। আর আতাউর রহমান তালুকদার তৈরী করে দিত ভুয়া ইউটিলিটি বিল, এমপ্লয়ার রেফারেন্স এবং ইংরেজী ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট।
প্রতারক চক্রের জালিয়াতির কথা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পুলিশ। ২০১১ সালে চক্রেরই এক সদস্য ম্যানচেষ্টার পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সব তথ্য ফাঁস করে দেয়। এর পরই আতাউর রহমান তালুকদারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশ যখন অভিযানে যায় তখন আতাউর রহমান তালুকদার নতুন একজন বাংলাদেশী ক্লায়েন্টের ‘ন্যাচারালাইজেশন প্যাকেজ’ তৈরী করছিলেন। অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরই ২০১১ সালে বার্কলেস ব্যাংকের চাকুরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন হারুন মিয়া। তাকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। আর চক্রের মূল হোতা আতাউর রহমানের ৮ বছরের কারাদন্ড হয়েছে। অপর দিকে, অবৈধভাবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন করা আরো প্রায় ২৪০ জন লোককে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। প্রতারক চক্রের সাহায্য নিয়ে ব্রিটিশ সিটিজেনশীপ অর্জন করে অনেকে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ব্রিটেনে নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। প্রতারক চক্রের মূল হোতা আতাউর রহমান তালুকদার সম্পর্কে মামলার রায়ে বিচারক বলেছেন, ব্যাক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে সে ইমিগ্রেশন আইন লংঘনের কাজে সাহায্য করেছে। হোম অফিসের মুখপাত্র গোয়েন্দা কর্মকর্তা সার্জেন্ট জেফ টেইলর বলেছেন, প্রতারণার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া এ সকল ইমিগ্র্যান্ট ব্রিটেনের ‘সোনার খনি’ হিসেবে পরিচিত বেনিফিট সিস্টেমে প্রবেশ করেছে। তিনি আরও বলেন, প্রতারকদের প্যাকেজের মূল্য ১০ হাজার পাউন্ড অনেক চড়া দামের মনে হলেও ব্রিটিশ হওয়ার তুলনায় এই অর্থ কিছুই না।মানবজমিন