ভূতপ্রেতের মেলা!

ডেস্ক : বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এ যুগেও ভূতপ্রেত নিয়ে কুসংস্কার দূর হয়নি। চরম উন্নত দেশ থেকে শুরু করে চরম দারিদ্র্যপীড়িত দেশ- সব জায়গায় আজও ভূত ও তন্ত্রমন্ত্র নিয়ে অন্ধ বিশ্বাস রয়েই গেছে। কিন্তু তাই বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে ভূতের মেলা! শুনতে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক গ্রামে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এ মেলা। দর্শনার্থীরও অভাব হয় না। অশুভ প্রেতাত্মার কবল থেকে মুক্তির আশায় মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলার মালাজপুর গ্রামে বসে মাসব্যাপী এ মেলা। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ভিড় জমায় মেলায়। পৌষ পূর্ণিমার প্রথম দিন মেলা শুরু হয়। চলে বসন্তপঞ্চমী পর্যন্ত। মেলায় আগতদের বিশ্বাস, কোনো ব্যক্তির ওপর অশুভ আত্মা ভর করলে তাকে মন্ত্রের সাহায্যে মুক্ত করা সম্ভব। তেমন বিশ্বাস থেকেই তারা এখানে আসে। এখানে এ ধরনের চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া হয়। সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী। এ বছরও এক হাজারের বেশি নারী মেলায় যোগ দিয়েছে। স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ভিখারি লাল যাদব জানান, এ মেলা প্রায় আড়াই শ বছরের পুরনো। অষ্টাদশ শতাব্দীর কোনো এক সময় গুরু দেওজি সন্তর মৃত্যুর পর তাঁর নামে তৈরি হয় সমাধি। এ সমাধিকে ঘিরেই মূলত এ মেলা বসে। বালুকে চিনিতে পরিণত করা, কাদা থেকে গুড় বানানো, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া_দেওজির মধ্যে এমন নানা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা ছিল বলে লোকজনের বিশ্বাস। মেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যার আরতি শেষে প্রেতাত্মামুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেওজির সমাধি ঘিরে মন্ত্র জপতে জপতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে সাধারণ মানুষ ঘুরতে থাকে। যাদের ওপর প্রেতাত্মা ভর করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়, তাদের মাঝখানে ঘড়ির কাঁটা বরাবর ঘুরতে দেওয়া হয়। ওই সময় তার ওপর পবিত্র পানি ছিটানো হয় এবং তাকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। চিকিৎসাধীন ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাস, এভাবেই ব্যক্তিকে প্রেতাত্মামুক্ত করা যায়। তবে ভূপালের গান্ধী মেডিক্যাল কলেজের মনোবিজ্ঞানী রাহুল শর্মার মতে, ‘প্রেতাত্মা’কবলিত ওই সব ব্যক্তি আসলে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাইকোথেরাপি, সোশিওথেরাপি এবং ওষুধের মাধ্যমে তাদের সুস্থ করা সম্ভব। মধ্যপ্রদেশ বিজ্ঞান সভার জেনারেল সেক্রেটারি এস আর আজাদ জানান, এসব অন্ধ বিশ্বাসভিত্তিক চর্চা প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। এ জন্য প্রায়ই বিজ্ঞানভিত্তিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর মতে, এসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।কালের কণ্ঠ