যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে গেলেন শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম
![](https://usanewsonline.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে গেলেন শোটাইম মিউজিকের কর্ণধার আলমগীর খান আলম। দীর্ঘ তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। প্রবর্তন করেছেন বহির্বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড নামের বিশেষ এক অ্যাওয়ার্ড। দেশের সিনেমা ও নাট্যজগতের বহু অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসেরও সুযোগ নিয়েছেন। অথচ যিনি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও কলাকুশলীদের জন্য এতকিছু করলেন, তিনিই কিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বেচ্ছায় ফিরে গেলেন বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয়মুখ শোটাইম মিউজিকের স্বত্ত্বাধিকারী আলমগীর খান আলম গত শনিবার সকালে কাউকে না জানিয়ে অ্যামিরাতের একটি ফ্লাইটে নীরবে নিভৃতে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন। আলমগীর খান আলম দেশে পৌঁছে আজ তার ফেসসবুকে লিখেন, আমার মমতাময়ী মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন l আমি গতকাল খবর পেয়ে ছুটে আসি মায়ের কাছে l সবার কাছে আমার মায়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি ।
আলমগীর খান আলমের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসলেও তাঁর বৈধ কাগজপত্র হয়নি। যে কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিজেই বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া তাঁর মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় মায়ের সেবা করতে দেশে ফিরে যান বলেও কারও কারও ধারণা।
তরুণ বয়সে পড়ালেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন আলমগীর খান আলম। প্রায় তিন দশক ধরে প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে অসংখ্য মানুষের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ও সখ্যতা গড়ে উঠে। তারা সবাই আলমের হঠাৎ দেশে ফিরে যাওয়ায় বেশ ব্যাথিত হয়েছেন। দেশে ফিরে গেলেও প্রবাসি বাংলাদেশিদের হৃদয়ে তিনি যুগ যুগ ধরে থাকবেন বলেও জানান তারা।
প্রায় দুই যুগ ধরে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন আলমগীর খান আলম। গত ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্কের ফ্লাশিং মিডোস করোনা পার্কের কুইন্স থিয়েটারের মিলনায়তনে বসে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের ২৪তম আসর। সেখানে দেশ ও প্রবাসের ২৭ জন শিল্পী-কলাকুশলীকে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করা হয়। এছাড়াও তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা মেলার আয়োজন করতেন। গত ১৯ জানুয়ারিও নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা মেলার আয়োজন করেন।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা জানান, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, টিভি এবং সংগীতাঙ্গনের শিল্পীদের যুক্তরাষ্ট্রে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ২৪ বছর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলাদেশ থেকে দুই ডজনের বেশি শিল্পী এনে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠান করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্যও বটে। আর সেই কাজটি টানা ২৪ বছর নিরলসভাবে করেছেন আলমগীর খান আলম।
আলমগীর খান আলমের ঘনিষ্ঠজন আহসান হাবিব তার ফেসসবুকে লিখেন, মায়ের টানে একজন সজ্জন নির্মোহ ও নিভৃতচারি নানুষের নীরব প্রস্থান। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অশ্রু সিক্ত নয়নে লিখতেও পারছিনা। অভিমানে নীরবে এভাবেই স্বদেশের উদ্দেশে চলে গেলেন ভাই! ভালো থাকুন আলম ভাই। আপনার সহচার্য খুবই মিস করবো। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নাই। কিছু ভালোবাসার সত্যিই প্রতিদান হয়না। আপনার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অবিরাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। সৃস্টিকর্তার কৃপা আপনার সাথে সবসময় থাকবে …
প্রিয় আলম ভাইয়ের জন্য লিখা …..
‘ওই আস্তাবলের মাথায় যে আকাশটা, ওরই ওপারে পূর্বদিকে বহুদুরে তাহাদের নিশ্চিন্দিপুর।আজ কতদিন সে নিশ্চিন্দিপুর দেখে নাই –
তি-ন বৎসর! ক-ত-কা-ল!
সে জানে নিশ্চিন্দিপুর তাহাকে দিনে রাতে সবসময় ডাকে,
শাঁখারিপুকুর ডাক দেয়,
বাঁশবনটা ডাক দেয়,
সোনাডাঙ্গার মাঠ ডাক দেয়,
কদমতলার সায়েবের ঘাট ডাক দেয়…’
(পথের পাঁচালী’র) অপুর তিন বছর অসীম মহাকালের অন্তহীন চক্রে হয়তো অতি নগন্য। কিন্তু ভাগ্যান্বেষণে স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে ভীন দেশে পাড়ি জমানো কোন প্রবাসীর অস্থির অনুভবে ত্রিশ বছরের ব্যাপ্তি অপরিমেয়। এখানে ঝলমলে হাসি, ঝিকিমিকি সুখ আর জমকালো আনন্দের মাঝেও কি যেন নেই। দিনের অবসরে অবর্ণনীয় এক শূন্যতা, রাতের নীরবতায় এক বুক হাহাকার…
‘কুল ছেড়ে এসে মাঝ দরিয়ায়
পিছনের পানে চাই,
ফেলে আসা তীরে, কি মায়া যে টানে
মন বলে ফিরে যাই ——’সবসময়। সবসময়।