শেয়ার বাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ

পবন আহমেদ: দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়ছে দিন দিন। বর্তমানে প্রবাসী বিনিয়োগ রয়েছে ১ হাজার ২৯৩ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগের প্রায় ৮ শতাংশ প্রবাসীদের। প্রতিবছরই এর পরিমাণ বাড়ছে।
গত অর্থবছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট বিনিয়োগের ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগের হার ছিল। ২০০৮ সালে তা ২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসে। ২০০৯ সালে তা নেমে আসে ২ শতাংশের কাছাকাছি। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেখা যেত কোন আইপিওতে প্রবাসীদের আবেদন পড়তো ৭ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে। এখন তা বেড়েছে সাত গুণেরও বেশি।
হঠাৎ করে এ বাড়ার পেছনে কাজ করেছে সরকার ও এসইসি। সর্বশেষ পুঁজিবাজারে আসা বিকন ফার্মা এবং আর একে সিরামিকে প্রবাসীদের আবেদন পড়েছিল যথাক্রমে ৬৯ হাজার এবং ৭৭ হাজার। এছাড়া গত ছয় বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৪ সালে বিদেশীরা ২১ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করে এবং ১৮ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। ২০০৫ সালে ৯ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করে এবং ২৫ কোটি ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার বিক্রি করে। ২০০৬ সালে বিদেশীরা ১৩৮ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করে এবং ৪৩ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করে। ২০০৭ সালে ১৪৯ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করে এবং বিক্রি করে ৫৫০ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার। ২০০৮ সালে বিদেশীরা ৫৫০ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করে এবং ৮১৪ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করে। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ কমে ৫০৩ কোটি ৮০ লাখ ৪৫ হয়েছিল। তবে চলতি বছরে তা তিনগুণ বেশি হবে বলে জানা গেছে। পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ডিএসই এবং এসইসি তেমন কোন উদ্যোগ না নিলেও বর্তমানে তারা এ বিষয়টির উপর নজরদারি বাড়িয়েছে। ফলে বেড়েছে প্রবাসীদের বিনিয়োগ। প্রবাসিদের বিনিয়োগ আরও সহজ করার জন্য চলতি বছরের শেয়ার লেনদেন চালু হতে যাচ্ছে অন লাইনে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিদেশীদের আকৃষ্ট করার জন্য এসইসি ও ডিএসইর সমন্বিত উদ্যোগ বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বেশিরভাগ বিদেশির স্বচ্ছ কোন ধারণা ছিল না। অন্যদিকে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। কিন্ত্র এখন সে চিত্র বদলেছে। ফলে প্রবাসীরা দেশের বাজার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাচ্ছে। পুঁজিবাজারের বয়স ৫৪ বছর পার হলেও বিগত বছরগুলোতে মাত্র ২ থেকে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল বিদেশি বিনিয়োগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাজার নিযন্ত্রণকারী সংস্থা বিশেষ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এতদিন তা অনুপস্থিত ছিল। অন্যদিকে বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত, প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এসইসি ও ডিএসই’র সমন্বিত উদ্যোগে পাশাপাশি বাজারে সুষ্ঠু ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ থাকা চাই। বর্তমানে যেটি আমাদের দেশের বাজারে বিরাজ করছে। আর এ কারণেই তাদের বিনিয়োগ বাড়ছে। এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বাজারের সার্বিক চিত্র ভালো থাকায় প্রবসীরা এখানে বিনিয়োগ করে স্বস্তি পাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের (প্রবাসীদের) বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যহত থাকবে। অনলাইনে লেনদেন চালু হলে বর্তমানে যে হরে বিনিয়োগ হচ্ছে এর থেকে আরো অনেক বেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. সালাহ উদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বিদেশীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে না। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আমাদের পলিসি মেকারদের আরও সক্রিয় হতে হবে। সে সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে তাদের দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে।