নিউইয়র্কে বর্ণিল আয়োজনে তিন দিন ব্যাপি ফোবানা কনভেনশন সম্পন্ন, আগামী বছরের কনভেনশনও নিউইয়র্কে (ভিডিও সহ)
ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম : নিউইয়র্কে উসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিন ব্যাপি ফোবানা কনভেনশন ২০২৪। নিউইয়র্ক লাগোর্ডিয়া এয়াপোর্ট ম্যারিয়টে গত ৩০-৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর ‘আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এবিসিসিআই)’র জমকালো আয়োজনে ছিল সেমিনার সহ দেশ-প্রবাসের স্বনামখ্যাত শিল্পীদের অনবদ্য পরিবেশনা। বিভিন্ন ধরণের পসরা নিয়ে সাজানো রকমারী স্টল। প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য এ ফোবানা কনভেনশনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভীড়। তুমুল করতালির মধ্যে কনভেনশনে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস গিয়াস আহমেদ আগামী বছর ৩৯তম ফোবানাও নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন।
৩০ আগস্ট হোটেলের বলরুমে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মানের উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সম্মেলনের আহবায়ক আসেফ বারী টুটুল, স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাহী সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, তারেক হাসান খান, ড. শওকত আলী, আলমগীর খান আলম, ডা. চৌধুরী সারওয়ার হাসান, মুনমুন হাসিনা বারীসহ কমিউনিটি নের্তৃবৃন্দ।
ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার অভিপ্রায়েই এই ফোবানা সম্মেলনের আয়োজন। গিয়াস আহমেদ বলেন, এবারের কনভেনশন দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করা হল।
কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা আয়োজকদের প্রশংসা করে বলেন, ফোবানার মাধ্যমে দুই দেশের শিল্প সাংস্কৃতিক এবং কবি, সাহিত্যিকদের মেল বন্ধন ঘটে। ফোবানা সম্মেলনই শুরু করেছিল এই যুগান্তকারী অধ্যায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে সম্মেলনস্থল হয়ে উঠে উৎসবমুখর। উৎসবে মেতে উঠেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তিনব্যাপী ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ছিল সেমিনার, আলোচনাসহ শিল্পীদের সুরের মুর্ছনা, দর্শক-শ্রোতার বাঁধভাঙ্গা উল্লাস। দেশ-প্রবাসের স্বনামখ্যাত শিল্পীদের পরিবেশনায় নিউইয়র্ক ফোবানার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
পরে ছিল অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য। এ সময় সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ৩৮তম ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, সকলের স্বতস্ফুর্ত এ উপস্থিতি বাংলাদেশ কমিউনিটিকে আরও এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবে।
সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান, অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান এবং বাবু জামানের উপস্থাপনায় ইমিগ্রেন্টদের আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তৃতা করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মো. নাজমুল হুদা, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের সিনিয়র এশিয়ান এডভাইজার উইনি গ্রেকু, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাসার, ড. শুক্লা, ডা. আব্দুস সবুর, ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাহী সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, খন্দকার ফরহাদ, দুলাল বেহেদু, অ্যাটর্নি মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, সাহাদাৎ হোসেন রাজু প্রমুখ।
সম্মেলনে কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস ও এসেম্বলি উইমেন জেনিফার রাজকুমারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
পরে বাংলাদেশ সোসাইটির সেলিম-আলী পরিষদের প্রার্থীরা দর্শকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় কওে সবার কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
এদিন সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীর, প্রতীক হাসান, ফিডব্যাকের লুমিন, কালা মিয়া, নাজু আকন্দ, চন্দন চৌধুরী, ত্রিনিয়া হাসান, ক্লোজআপ তারকা শশী, রায়ান তাজ, প্রমি তাজ প্রমুখ। দ্বিতীয় দিনে মানুষের ছিল উপচেপড়া ভীড়।
সমাপনী দিনে শিল্পীদের পরিবেশনাই ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এদিনে জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী (প্রমিথিউস) বিপ্লব ও বাউল শিল্পী লায়লার পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতা প্রাণভরে উপভোগ করেন। এছাড়া চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ কৃষ্ণা তিথি, শাহ মাহবুব, শামীম সিদ্দিকী, ত্রিনিয়া হাসান, রিয়া, আমানত হোসেন আমানের পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাকে মৃগ্ধ করে। ছুটির দিন হওয়ায় ম্যারিয়টের হলরুম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। নিউইয়র্ক ফোবানার সমাপনী দিনটিও ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক মিলনমেলা।
সম্মেলনের শেষদিনেও বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ফোবানাকে সাইটেশন প্রদান করেন অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেস রাহোস। এছাডাও অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার এবং কুইন্স বরো প্রেসিডন্ট ডনোভান রিচার্ড এর পক্ষ থেকে বিশিষ্ট জনকে সাইটেশন প্রদান করা হয়।
সমাপনী বক্তৃতায় ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনের সাথে সংশিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনাদের স্বতঃস্ফুর্ততায় আমরা অভিভূত। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী ফোবানাও এই নিউইয়র্কেই অনুষ্ঠিত হবে। উপস্থিত সকলেই করতালি দিয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
এসময় ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান বলেন, নিউইয়র্কবাসীকে বিনোদন দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমরা, কতটা পেরেছি, এর মূল্যায়নের ভার আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মিয়া মোহাম্মদ দুলাল ও জাহাঙ্গীর আলম জয়ের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাহী সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, তারেক হাসান খান, ডা. রহমান মুক্তা, ডা. বর্ণালী হাসান, লায়ন রকি আলিয়ান, লায়ন জেএফএম রাসেল, মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, মুসতাক আহমেদ, বিলাল চৌধুরী, নুর আমিন, মুহাম্মদ কাদের শিশির, কাজি তোফায়েল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমি, তৈমুর জাকারিয়া, কিউ জামান, কাজি ওয়াহিদ এলিন, নাফিউল ইসলাম পাননা, সোহরাব হোসেইন, মুহাম্মদ মহসীন, মিয়া আলীম পাখি, রিয়াজ রহমান, এম এম জসিম, কাউসার আহমেদ, এমরান শাহ রন, সৈয়দ গাওসুল আজম, সাইদ রহমান সাইদ, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তরের সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, নুসরাত আহমেদ নীপা, মোশাররফ হোসাইন সবুজ, জসিম ভুঁইয়া, ভিপি জসিম, সৈয়দ এ আর ফারুক, শাহিনুর রহমান বিপ্লব, , প্রিসিলা, মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বাদল মীর্জা, সাইফুর খান হারুন, মাকসুদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সবুর, আব্দুর রশিদ বাবু, বদিউল আলম, আবদুল বাতেন, জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ইসমাইল চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ সাদেক, সাহাদাৎ হোসেন রাজু, দেওয়ান কাউছার প্রমুখ। ছোট, বড় সব বয়সী মানুষের পদচারণায় সম্মেলনস্থল ছিল উৎসবমুখর।