আমাজন বন : বিশ্বের ফুসফুস

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বিশ্বের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ক্রান্তীয় বৃষ্টিবন (রেইনফরেস্ট)। এর আয়তন ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার (২১ লাখ বর্গমাইল)। বিশ্বের অবশিষ্ট মোট বৃষ্টিবনের অর্ধেকের বেশি এখনও এখানে সংরক্ষিত আছে এবং বিশ্বের সব ধরনের প্রাণী ও গাছপালার অর্ধেকেরও বেশি প্রজাতি এই বনের আশ্রয়ে আছে। কিন্তু গত ৪০ বছর ধরে বিশ্বের সর্ববৃহত্ এই চিরহরিত্ বনটি ক্রমে ধ্বংস হওয়ার হুমকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ সালে বন ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ’৯০ দশকে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। এই সময়ের মধ্যে স্পেনের সমান (৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯২ কিলোমিটার) একটি এলাকার বন ধ্বংস করে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। প্রধানত গবাদিপশু পালন ও সয়াবিন চাষের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক বনের এই বিশাল অংশটি ধ্বংস করা হয়। কিন্তু বন পরিষ্কার করে বের করা জমি দ্রুত উর্বরতা হারিয়ে ফেলায় খুব বেশিদিন সয়াবিন উত্পাদন করা যায়নি। এর অর্থ হলো ব্যবসা চালিয়ে নিতে কৃষি খামারগুলোকে আরও বন ধ্বংস করে নতুন জমিতে চাষ অব্যাহত রাখতে হবে। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী এর ভয়াবহ প্রভাব উপলব্ধি করে বন ধ্বংস করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে এর হার কমে আসতে থাকে। ২০১১ সালে বন ধ্বংসের হার আগের সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন মাত্রায় এসে দাঁড়ায়। কিন্তু তারপরও তা অব্যাহত থাকে। এতে ওই এলাকায় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু এই ভারসাম্যহীনতা পুরো বিশ্বের ওপরই প্রভাব ফেলে। কারণ আমরা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যে বাতাস গ্রহণ করি তা পরিষ্কার করতে এই বন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গাড়ি, বিমান ও বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রগুলোর মতো অন্য সব উেসর নিঃসরিত কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নিয়ে বিশ্বের বাতাসকে কার্বন দূষণমুক্ত রাখে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই কার্বন দূষণ ‘শোধনাগার’টির ধ্বংস মানেই বিশ্বের বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলা। আর বাতাসে কার্বন ডাইআক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া মানেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা তথা উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়া। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তুষারপাত, গরম ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়ে প্রকৃতি কঠোর রূপ ধারণ করছে। পর্বত শিখর ও উত্তর-দক্ষিণ মেরুর বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপকূল উপচে সমুদ্রের নোনা পানি দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ছে ও সমুদ্র সৈকত ডুবে যাচ্ছে। একদিকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের উত্স বৃদ্ধি ও অপরদিকে বন ধ্বংস বিশ্বকে ক্রমাগত মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলছে।আমার দেশ