Saturday - March 15, 2025 5:08 PM

Recent News

দাম্পত্য সম্পর্কে ভালোবাসার প্রভাব

আশরাফ আলি থানুভি : দাম্পত্য জীবনে পুরুষ মানুষের স্বভাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারি। ধার্মিক মানুষেরাও বলেন, কোরআন শরিফে আছে, মহিলাদের ওপর পুরুষ কর্তৃত্বশীল। এই আংশিক বক্তব্যের সূত্র ধরে স্ত্রীর সঙ্গে চলে চাকরানি/বুয়াদের মতো আচরণ। এটা মারাত্মক খারাপ মানসিকতা। অবশ্যই এই স্বৈরাচারি মনোভাব পাল্টাতে হবে। [অনেকে এমন কথাও বলে থাকেন, স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত। প্রচার করে, এটা নাকি প্রিয়নবির (সা) হাদিস। চরম বেয়াদবি। হাদিস তো নয়ই, বিশিষ্ট কোনো আলেম, পীর ও মাশায়েখের বক্তব্যও নয়। হাদিসে আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।] উপরের আংশিক আয়াতের বক্তব্যের পাশাপাশি কোরআনুল কারিমে উলেখ হয়েছে- তার আরো এক নিদর্শন, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। এর ফলে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক। তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক সমপ্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। [সুরা আর রুম, আয়াত ২১] কোরআনের এই বাণী স্বৈরাচারি স্বামীরা ভুলে যান। অনেকে আছেন, জানেনও না। পুরুষেরা মহিলাদের পরিচালনা করবে। এর অর্থ এই নয়, মহিলারা তাদের কেনাদাস। উভয়ের মাঝে বন্ধুত্ব ও গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্য স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই আন্তরিক ও উদ্যোগী হবে হবে। ভালোবাসার সম্পর্ক মজবুত হলে দাম্পত্য জীবনে দুনিয়াতেই বেহেশতি সুখ মিলে। পুরুষেরা সংসার পরিচালনায় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবস্থাপনার এই দায়িত্ব বোঝাতে গিয়েই কোরআন শরিফে উলেখ হয়েছে- মহিলাদের ওপর পুরুষ কর্তৃত্বশীল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পুরুষের। এক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে স্ত্রীর পরামর্শ, প্রস্তাব এবং দাবির যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুত্ব সম্পর্কের নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকরণও আছে। গতানুগতি ভালোবাসার চেয়ে এই ব্যাকরণগুলো আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, জীবনঘনিষ্ঠ এবং উত্তম। পুরুষ মানুষের কেউ কেউ স্ত্রীর কাছে গেলে অযথা গম্ভীর হয়ে থাকেন। রসকষহীন কথা এবং অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গিতেই স্ত্রীর দিল কাঁপিয়ে রাখেন। স্ত্রীর পক্ষে তখন চাইলেও স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পন্ন করা, মিষ্টিমাখা কথাবলা এবং চলাফেরা সম্ভব হয় না। আমার এক বন্ধু একবার সাক্ষাতে এসে গর্বের সঙ্গে বললেন, কয়েক মাস পর পর বাড়িতে গেলে স্ত্রী ও সন্তানেরা আমার সামনে এসে কথা বলার দুঃসাহস দেখাতে পারে না! গর্বের সঙ্গে কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই বলি, বাড়িতে গেলে আপনি সিংহ বা বাঘ হয়ে যান নাকি? তা না হলে আপনার স্ত্রী-সন্তান আপনার কাছে আসবে না কেন? জবাবে বললেন, না। ওসব কিছু নয়। আমরা পুরুষ। নারীর ওপর কর্তৃত্বশীল। আমাদের গাম্ভীর্য থাকা চাই! প্রিয় পাঠক, কর্তৃত্ব মানে এই নয়, স্ত্রী-সন্তানেরা আপনার কাছে আসতে পারবে না। প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবে না। কর্তৃত্বের ভেতর অবশ্যই নির্ভেজাল ভালোবাসা ও দরদ থাকতে হবে। ইদানীং কিছু কিছু স্ত্রী উগ্র ও অস্বাভাবিক জীবনযাপনে মাতোয়ারা। তারা স্বামীর দেখভাল করার কাজটিও বুয়াদের হাতে তুলে দেন। নিজেরা নানারকম উদ্যোগে যুক্ত থাকছেন। এতে করে দাম্পত্য জীবনে প্রথমে সন্দেহ, পরে অভিযোগ, একপর্যায়ে দাম্পত্য সম্পর্কই ভেঙে যায়। এর মাঝে উদ্বেগজনক অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে। এসব বিষয়ে স্ত্রীকে অধিকতর সতর্ক হতে হবে। সংসারে মনোযোগ দিতে হবে। পরিবারের বাইরের কাজে স্বামীকে ইসলামি শরিয়া মেনে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে চাইলে মানা নেই। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্ত্রীর দায়িত্ব হলো, স্বামীর অর্থসম্পদের হেফাজতে সহযোগিতা করা। এসব টাকাপয়সা খারাপ কাজে, অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা থেকে বিরত রাখা। ‘ইরশাদাতে আকাবির’ থেকে ছায়া অনুবাদ সালমান ফিদা/কালের কণ্ঠ

0Shares

COMMENTS