যুক্তরাজ্যে সাত ‘শ্রেণী’র মানুষের বাস

যুক্তরাজ্যের মানুষকে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নতুন সাতটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। শ্রেণীগুলো হলো অভিজাত, প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত, কৌশলগতভাবে মধ্যবিত্ত, নতুন ধনী শ্রমিক, গতানুগতিক শ্রমিক, অভিবাসী সেবা শ্রমিক ও নিরাপত্তাহীন সর্বহারা। নতুন শ্রেণী করার পেছনে কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলেন, গতানুগতিক শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত—এ তিনটি শ্রেণী নিয়ে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসটি পুরোনো হয়ে গেছে। আর এটি যুক্তরাজ্যের মাত্র ৩৯ শতাংশ মানুষ শ্রেণীবিন্যাসের মধ্যে পড়ে। যুক্তরাজ্যের এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ শ্রেণীবিন্যাসের সমীক্ষাটি করেছে দেশটির বিবিসি ল্যাব ইউকে। আর এ-সংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশ করবে সোশিওলজিক্যাল জার্নাল সাময়িকী। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের সমাজবিজ্ঞানবিষয়ক একটি সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার নিবন্ধটি উপস্থাপন করা হবে। নতুন শ্রেণীগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অভিজাত: যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ তাঁরা। অন্য সব শ্রেণীর চেয়ে তাঁরা অনেক ধনী। তিনটি পরিমাপকেই তাঁদের অবস্থান সর্বোচ্চ। প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত: সম্পদের দিক থেকে তাঁরা দ্বিতীয় অবস্থানে। সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রথম অবস্থানে। যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ মানুষ এ শ্রেণীভুক্ত। কৌশলগতভাবে মধ্যবিত্ত: সম্পূর্ণ নতুন একটি সামাজিক শ্রেণী। তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে তাঁদের অবস্থান ভালো নয়। নতুন ধনী শ্রমিক: নতুন এ শ্রেণীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান বেশ ভালো। কিন্তু সম্পদের পরিমাণ মোটামুটি। গতানুগতিক শ্রমিক: প্রতিটি পরিমাপকেই তাঁদের অবস্থান মোটামুটি খারাপ। কিন্তু পুরোপুরি বঞ্চিত নয়। আর সম্পদের পরিমাণ মোটামুটি। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ১৪ শতাংশ মানুষ এ শ্রেণীভুক্ত। অভিবাসী সেবা শ্রমিক: নতুন এ শ্রেণীটির মানুষ তুলনামূলক গরিব। কিন্তু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা মোটামুটি। নিরাপত্তা ও বিত্তহীন সর্বহারা: সবচেয়ে গরিব ও বঞ্চিত শ্রেণী। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়েও তাঁদের অবস্থান ভালো নয়। যুক্তরাজ্যের ১৫ শতাংশ মানুষ এ শ্রেণীভুক্ত। শ্রেণীবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য: আগে শ্রেণীবিন্যাস করা হতো পেশা, সম্পদ ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে। অতি সহজ ভিত্তিতে করায় শুধু তিনটি বিষয় একজনের শ্রেণী নির্ণয়ে গণ্য হতো। এগুলো ছিল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা। অন্যদিকে নতুন শ্রেণীবিন্যাস আরও গভীরভাবে করা হয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক বিষয় আয়, সঞ্চয়, আবাসন অবস্থা ইত্যাদি আমলে নেওয়া হয়েছে। আর সামাজিক বিষয় মূল্যায়নে পরিচিত মানুষের সংখ্যা ও পরিচিতির সামাজিক অবস্থাও দেখা হয়েছে। সবশেষ সাংস্কৃতিক অবস্থা মূল্যায়নে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংগ্রহণের পরিমাণ ও প্রকৃতি দেখা হয়েছে। গবেষকেরা নতুন শ্রেণীবিভাগ বিষয়ে বলেন, আগের শ্রেণীবিন্যাসের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক শ্রেণী। নতুন শ্রেণীবিন্যাসে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শ্রেণীর মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। গবেষণার পদ্ধতি: গবেষণার শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের আয়, বাড়ির মূল্য, সঞ্চয় এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে নম্বর দেওয়া হয়। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই শনাক্ত করা হয় একজনের শ্রেণী। উল্লেখ্য, শুরুতে অনলাইনে গবেষণার কাজটি করা হলেও পরে একটি সমীক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া হয়। বিবিসি।প্রথম আলো