Saturday - May 18, 2024 9:36 PM

Recent News

একজন জাদুকর নাম তাঁর ‘মজিবর’‌‌

আবদুল মান্নান : ১৫ আগস্ট তারিখটি বাংলা ও বাঙালির দিনপঞ্জিতে এক মর্মন্তুদ শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িতে সপরিবারে হত্যা করেছিল। তাদের প্রত্যক্ষভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কাছের কিছু আস্থাভাজন মানুষ। আজকের এ দিনটিতে বঙ্গবন্ধু এবং ওই দিন ঘাতকদের হাতে নিহত সব শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
সমসাময়িক ইতিহাসে এমন একটি নৃশংস ও পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বিরল ঘটনা। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাইয়ের ইরাকের বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সালের সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। এদিন ইরাকি জেনারেল করিম কাসেম বাদশাহ দ্বিতীয় ফয়সালকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উত্খাত করে ইরাকে রাজতন্ত্রেরর অবসান ঘটিয়ে সামরিক তনে্ত্রর গোড়াপত্তন করেন এবং অভ্যুত্থানের সময় রাজপ্রাসাদে বাদশা দ্বিতীয় ফয়সালের পরিবারের প্রায় ২১ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সময় ফয়সালের মা পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতরত ছিলেন। ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকরা হত্যা করে তখন বাংলাদেশের সব মসজিদে মুয়াজ্জিনদের সুললিত কণ্ঠে ফজরের নামাজের আজান ভেসে আসছিল। হয়তো বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ পর নামাজের জন্য শয্যা ত্যাগ করতেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর ফজরের নামাজ আর পড়া হয়নি। প্রতি সপ্তাহের মতো সেদিন তাঁর জুমার নামাজ পড়তেও আর যাওয়া হয়নি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ছিল শুক্রবার। তিনি একজন মুমিন ছিলেন এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন।
কেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু নামের ওই জাদুকরি মহানায়ক, যাঁকে কয়েক বছর আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি জনগণের ভোটে চিহ্নিত করেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে অথবা কেনই বা তাঁকে এমন নৃশংসভাবে নিহত হতে হলো? এমন প্রশ্ন আমার প্রজন্মের অনেকের কাছে বর্তমান প্রজন্ম প্রায়ই করে। কয়েক দিন আগে একটি টিভির টক শোতে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন, সাধারণ মানুষ যাতে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে সহজে জানতে পারে ঠিক সেভাবে আমরা যেন কথা বলি অথবা লিখি। তাঁর সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। আমি বলি, কেমন করে রাজনৈতিক অঙ্গনের একজন সাধারণ কর্মী জনগণের নেতা হয়ে ওঠেন তা জানতে হলে সবচেয়ে সহজ পাঠ্য হলো বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। সেটি পড়লে বোঝা যাবে কেন বঙ্গবন্ধু একটি জাতির জন্ম দিতে পেরেছিলেন, কেনই বা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ বাঙালি নিজের জীবনকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য উত্সর্গ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর আমন্ত্রণে আমার টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তবে সেই কাদের সিদ্দিকী এখনকার কাদের সিদ্দিকী নন। নামে ব্যক্তি এক হলেও ১৯৯৪ সালের বা তাঁর আগের কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে এখনকার কাদের সিদ্দিকীর কোনো মিল নেই। তখন গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার একমাত্র বাহন ছিল তিন চাকার রিকশাভ্যান। টুঙ্গিপাড়া বাংলার হাজারো নিভৃত পল্লীর মতো একটি অজ পল্লী। সেদিন কথা বলেছিলাম বঙ্গবন্ধুকে যাঁরা কাপড় ধোয়ার ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে রেডক্রসের রিলিফের কাপড়ের কাফন পরিয়ে কবর দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে। সেদিন সেই বৃষ্টিভেজা রাতে তাঁরা তাঁদের ‘মজিবরের’ কথা শুনিয়েছিলেন আমাকে। তাঁদের শুনিয়েছিলাম কেমন করে তাঁদের ‘মজিবর’ বিশ্বের মানচিত্রটাকে বদলে দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন।
অনেকের প্রশ্ন- কী ছিল বঙ্গবন্ধুর, যা তাঁর সমসাময়িক অন্য নেতাদের ছিল না? তাদের বলি, এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। এর পরও তারা শুনতে চায়। বলি, যোগ্য মানুষের হাতে পড়লে সে তো এক মহাকাব্য হবে। এর পরও বলি, বঙ্গবন্ধু এমন একজন মানুষ ছিলেন, যঁার কথায় এবং কাজের মধ্যে কোনো তফাত থাকত না। তাঁর কথায় মানুষ আস্থা রাখতে পারত। তিনি সহজে বাংলা ও বাঙালির কথা বলতে পারতেন। ১৯৬৮ সালে যখন বঙ্গবন্ধুর নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা রজু করা হলো তখন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালে যে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, এর পেছনে মূল কারণ ছিল কারাগার থেকে শেখ মুজিবকে (তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হননি) মুক্ত করতে হবে। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে তাঁকে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ যে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল এর কারণ, তিনি বলেছিলেন তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার হলো ঐতিহাসিক ছয় দফা। তিনি হয়তো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো বলেননি, ‘আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।’ তবে মানুষ ঠিকই বুঝেছিল আওয়ামী লীগের ছয় দফার মধ্যে বাঙালির মুক্তি আর স্বাধীনতার বীজ বপন করা আছে।
১৯৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ মারা গেল। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ঢাকা হয়ে পিকিং গেলেন। সময় হলো না তাঁর এই ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত এলাকা একটু ঘুরে দেখার অথবা বাংলার মানুষকে সহানুভূতি জানানোর। এমনকি ইয়াহিয়ার মনি্ত্রসভার একজন সদস্যও ইসলামাবাদের শীতাতপ নিয়নি্ত্রত কক্ষ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে এসে বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। বাঙালির প্রতি পিণ্ডির শাসকদের কী এক চরম অবজ্ঞা! বঙ্গবন্ধু বললেন, এ অবজ্ঞার জবাব বাংলার মানুষ আসন্ন নির্বাচনে তাদের ব্যালটের মাধ্যমেই দেবে। তারা তাই দিয়েছিল। পূর্ব বাংলার ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে বিজয়। পাকিস্তানের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। পাকিস্তানের সব গোয়েন্দা সংস্থা ইয়াহিয়া খানকে এ ধারণা দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ বড়জোর ৭০-৮০টি আসনে জয়ী হবে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য কদাচিত্ সঠিক হয়। বাকিটা ইতিহাস। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা আর রক্তের ইতিহাস।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার পর বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি লন্ডন, দিলি্ল হয়ে এক পড়ন্ত বিকেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আজকের প্রজন্মকে বোঝানো যাবে না, কেমন ছিল সেই পড়ন্ত বিকেল বা কেমনই বা ছিল তখন বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা? সারা বাংলাদেশে আগের দিনই খবর হয়ে গিয়েছিল ১০ তারিখ সেই মহামানব আসবেন, যঁার অমর কীর্তি এই স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই পড়ন্ত বিকেলে লাখো জনতা ছুটে গিয়েছিল রমনা রেসকোর্স ময়দানে, যেখানে দাঁড়িয়ে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের কঠিন দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছিলেন। প্রায় এক কোটি ছিন্নমূল শরণার্থী ভারত থেকে দেশে ফিরছে। দেশের ভেতরে কমপক্ষে দুই কোটি উদ্বাস্তু। চারদিকে লাখ লাখ স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি। বাতাসে তখনো বারুদের গন্ধ। দেশের যোগাযোগব্যবস্থা পলায়নরত পাকিস্তানি বাহিনী সম্পূর্ণ ধ্বংস করে রেখে গিয়েছে। তাদের পোঁতা ভাসমান মাইনের (বোমা) কারণে দেশের উভয় সমুদ্রবন্দরই অচল। ব্যাংকগুলোর ভল্ট শূন্য। খাদ্য গুদামগুলোতে নেই এক ছটাক চাল। বেসামরিক প্রশাসন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীন-মার্কিন-সেৌদি বলয় বাংলাদেশের জন্য একটি প্রচণ্ড বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। দেশের অভ্যন্তরে এ দেশীয় পাকিস্তানি দালাল ঘাতক রাজাকার-আলবদর, জামায়াত আর চীনপন্থী অতিবামরা মিলে প্রতিনিয়ত চালাতে শুরু করল নানা ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক তত্পরতা। আজ এই পাটের গুদামে আগুন লাগে তো কাল ওই কারখানায় বিস্ফোরণ। সেই সব চ্যালেঞ্জ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছিল বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের সরকার। কারণ তাদের কাছে সব কিছুর আগে ছিল দেশের স্বার্থ আর নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যাঁর দৃঢ়তা ছিল আর ছিল এক জাদুকরি সম্মোহনী শক্তি। এই সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় বাহিনীকে সসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পেরেছিলেন। শরণার্থী আর উদ্বাস্তুরা পুনর্বাসিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে। এসেছিল দুই শতাধিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। বাংলাদেশকে তিনি জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনসহ অন্যান্য বিশ্বসংস্থার সদস্য করতে পেরেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ে তিনি একটি স্বাধীন দেশের জন্য এক অসাধারণ সংবিধান প্রণয়ন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরও কেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এই মহামানবকে জীবন দিতে হলো- এমন প্রশ্ন অনেকের।
বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে। একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জহুরুল কাইউম ষড়যন্ত্রের অন্যতম হোতা খোন্দকার মোশতাকের হয়ে কলকাতায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। মোশতাকের বার্তা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে তিনি স্বাধীনতার বদলে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য মুজিবনগর সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। তবে এ জন্য বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে হবে। ওয়াশিংটন থেকে এ প্রস্তাব ঝুঁকিপূর্ণ হবে, এই অজুহাতে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এই স্বীকারোক্তি মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন পররাষ্ট্রসচিব হেনরি কিসিঞ্জারের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাই হোয়াইট হাউস ইয়ার্স’ গ্রন্থে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এই ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। একজন রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে হত্যা করতে প্রয়োজন একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনা আর তাঁর কাছের মানুষের সার্বিক সহযোগিতা, যা একাত্তরের ঘাতকরা প্রস্তুত করতে পেরেছিল। প্রথমেই তারা সফলভাবে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর একান্ত আস্থাভাজন, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছিল। তাঁর একান্ত কাছে যেতে পেরেছিল কয়েকজন। ঘাতক বাহিনীর অন্যতম সেনা কর্মকর্তা মেজর ডালিম (তখন সেনাবাহিনী থেকে অপসারিত) বঙ্গবন্ধুর অন্দর মহলে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। আরেক ঘাতক কর্নেল রশিদ এপ্রিল মাসে সামরিক বাহিনীর তত্কালীন উপপ্রধান জেনারেল জিয়াকে তাঁদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। জিয়া বলেছিলেন, যেহেতু তিনি একজন সিনিয়র সেনা অফিসার তাই তাঁদের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। প্রখ্যাত সাংবাদিক এন্থনি মাসকেরানহাসের সঙ্গে লন্ডনে এক টিভি সাক্ষাত্কারে রশিদ এ বক্তব্য দিয়েছেন। জিয়ার উচিত ছিল এ তথ্যটি যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তা তিনি করেননি। বঙ্গবন্ধু জিয়াকে পুত্রবত স্নেহ করতেন এবং শুধু তাঁর জন্যই তিনি সেনাবাহিনীতে উপপ্রধানের পদটি সৃষ্টি করেছিলেন। ওই পদে পরবর্তীকালে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। জিয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই দেশে বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চষ্টো করা হয়েছে এ কথা বলে মুসলমানদের পবিত্র ভূমি পাকিস্তান ভেঙে হিন্দুদের বাংলাদেশ বানানো হয়েছে এবং এটি একটি হিন্দু ভারতের করদ রাজ্য।
ছোট্ট একটি ঘটনা কেমন করে বড় হতে পারে, এর একটি নমুনা হলো- ১৯৭৩ সালের কথা। সাভারের একটি তামাকের হিন্দু দোকানদার একটি উর্দু ম্যাগাজিনের পাতা দিয়ে বাজারের দিন তামাক বিক্রি করছিলেন। বাজারে রটে গেল ব্যাটা হিন্দু পবিত্র কোরআন শরিফ ছিঁড়ে তামাক বিক্রি করছেন। আর যায় কোথায়? বাজারসুদ্ধ মানুষ হামলা করল তামাকের দোকানে। কোনো রকমে পালিয়ে দোকানি প্রাণ বাঁচালেন।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের ইতিহাস এখনো গবেষকদের কাছে একটি তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা। বিশষ্টি অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম উপপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু চেয়ারম্যান) ড. নুরুল ইসলাম তাঁর গ্রন্থ Making of a Nation: Bangladesh-এ লিখেছেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে চালের উত্পাদন ১৯৭৩ সালের চেয়ে বেশি হয়েছিল। একই বছরের জুলাই-আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যায় দেশের তখনকার একমাত্র বৈদেশিক অর্থ উপার্জনকারী ফসল পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। একই সঙ্গে কৃষকদের পরবর্তী আমন চাষেও ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিল। এমনিতে সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক হারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যপণ্যের মূল্য চড়া ছিল। এর ওপর বাংলাদেশের এক শ্রেণীর গণমাধ্যম এই সংবাদ ছড়িয়ে দিল যে বাংলাদেশে আউশ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমন ফসলের উত্পাদন ব্যাহত হবে। এ সংবাদে আড়তদাররা খাদ্য মজুদ শুরু করে দিল। এর ফল হলো আরো চড়া খাদ্যমূল্য। পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়তা করতে পারত যুক্তরাষ্ট্র তার পিএল-৪৮০ খাদ্য সহায়তার অধীনে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা করা থেকে বিরত থাকে এবং অজুহাত হিসেবে তারা বলে, বাংলাদেশ তাদের শত্রু দেশ কিউবার কাছে চটের ব্যাগ বিক্রি করেছে। এটি যে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে একটি চরম অপরাধ, তা কিন্তু বাংলাদেশের কাছে জানা ছিল না অথবা যুক্তরাষ্ট্রও এই ‘মহামূল্যবান’ তথ্যটি বাংলাদেশকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। এরপর দৈনিক ইত্তেফাকে ছাপা হলো অর্ধপাগল সেই বিখ্যাত বাসনি্তর জাল পরা ছবি। বলা হলো, দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষের এতই দুর্দিন যে, পরিধেয় বস্ত্র না থাকায় এখন মহিলারা পর্যন্ত মাছ ধরার ছেঁড়া জাল পরে থাকতে হচ্ছে। পরবর্তীকালে ফটোগ্রাফার নিজেই স্বীকার করেছিলেন, ওটি আসলে একটি সাজানো ছবি ছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেন। তিনি তাঁর নিকটজনদের বলেছিলেন, এটি অনেকটা একটি আপত্কালীন শাসনব্যবস্থা। তিনি এ কারণে তা করেছেন, যাতে বিভিন্ন মত ও পেশার মানুষ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়। কিন্তু বাকশাল ব্যবস্থা প্রয়োগ হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে প্রাণ দিতে হয়। তিনি হয়ে যান বাংলা আর বাঙালির ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক হিরো। মোশতাক আগের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত ৩২ নম্বরের বাড়িতে ছিলেন। ঘাতকদের তিনি নামকরণ করেছিলেন ‘সূর্যসন্তান’। অনেকে কথায় কথায় বাকশালের তুমুল সমালোচনা করেন। কিন্তু ব্যবস্থাটির ভালো-মন্দ বিচার করার কোনো সুযোগই তো কখনো সৃষ্টি হয়নি।কালের কণ্ঠ
বাঙালি সেই পঞ্চাশের দশক থেকে দেশের বিভিন্ন ক্রানি্তকালে আওয়ামী লীগ আর তার কাণ্ডারি ‘মজিবর’-এর দিকে তাকিয়ে থাকত। তারা মনে করত, তাঁর কাছে এমন এক জাদুকরি শক্তি আছে, যাতে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেই তাকানোটা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল সত্তরের নির্বাচন এবং এর পরবর্তীকালে। এখন সেই আওয়ামী লীগ আর আছে কি না, তা কোটি টাকার প্রশ্ন। তবে এটি তো ঠিক, জনমানুষের সেই ‘মজিবর’ নেই। ঘাতকরা তাঁকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এই দিনে সেই মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই বিখ্যাত গায়ক মান্না দে’র কণ্ঠে :
যদি হিমালয় আল্পস-এর সমস্ত জমাট বরফ
একদিন গলেও যায়, তবুও তুমি বাংলার
যদি গঙ্গা ভলগা হোয়াংহো নিজেদের
শুকিয়ে রাখে,
যদি ভিসুবিয়াস ফুজিয়ামা একদিন জ্বলতে জ্বলতে জ্বলেও যায়
তবুও তুমি বাংলার।
জয়তু মহানায়ক, জয়তু বঙ্গবন্ধু
লেখক : সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় I

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা

মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন পর্যায়ের একজন ব্যক্তি, যাকে নিয়ে লেখালেখি হতেই থাকবে। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এমন ব্যক্তির সংখ্যা কোটি কোটি এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে, প্রচুর লোক তার সমালোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগটি দীর্ঘ; যথাÑ গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ২৫-২৬ বছর। তৃতীয় ভাগ নাতিদীর্ঘ; যথাÑ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখের প্রত্যুষ পর্যন্ত। প্রথম ও তৃতীয় ভাগের মাঝখানে ৯ মাস সময় হচ্ছে তার জীবনের দ্বিতীয় অংশ, যখন তিনি তখনকার আমলের পশ্চিম পকিস্তান বা বর্তমানে পাকিস্তানের জেলখানায় বন্দী ছিলেন। এই সংক্ষিপ্ত কলামে আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধামূলক মূল্যায়ন করব। ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। এর দুই-এক বছর আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু তৎকালীন বঙ্গপ্রদেশের রাজধানী কলকাতা শহরে পড়ালেখা করতেন এবং মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলিম লীগ। পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই তৎকালীন ছাত্র ও ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় চলে আসেন। পাকিস্তান সৃষ্টির মহানায়ক ও তার রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ নতুন দেশ শাসন করতে গিয়ে বড় বড় ভুল করা শুরু করে, বিশেষত পূর্ববঙ্গে। ফলে পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলিম লীগের প্রতি বিতৃষ্ণা ও অপছন্দ শুরু হয়। সেই সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়। সেই নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ছিল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। আওয়ামী কোনো বাংলা শব্দ ছিল না; পশতু ও উর্দু শব্দ ছিল। আওয়াম শব্দের অর্থ জনগণ। তাহলে নতুন পার্টির নামের অর্থ দাঁড়ায় জনগণের মুসলিম লীগ। নতুন পার্টির উদ্যোক্তাদের মতে, পাকিস্তান সৃষ্টিকারী মুসলিম লীগ জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে অভিজাতগণের খপ্পরে বন্দী হয়ে গিয়েছিল, তাই নতুন পার্টি সৃষ্টি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। যেমন কি না আট-দশ বছর আগে, ভারতের প্রখ্যাত রাজনৈতিক দল কংগ্রেস থেকে আলাদা হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম তরুণ নেতা ছিলেন তখনকার শেখ মুজিবুর রহমান। আনুমানিক সাত-আট বছর পর আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। আওয়াম বা আওয়ামী শব্দ দু’টি বাংলা ভাষায় স্বাধীনভাবে কোনো শব্দ হিসেবে পরিচিত নয়; কিন্তু বহুল পরিচিত একটি রাজনৈতিক দলের নাম বা নামের বিশেষণ হিসেবে পরিচিত। নবীন ও তরুণ রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ বা আ’লীগ নামক দলটিতে ক্রমান্বয়ে নেতৃত্বের সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতে থাকেন। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে রাজনৈতিক অঙ্গনের সব গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতেন। অনেকবার অনেক জায়গা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং বিভিন্ন কিস্তিতে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি জেলে বন্দী থাকেন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৭ দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী উন্মুক্ত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয়েছিল। সে সময় বাঙালি বা বাংলাভাষী অধ্যুষিত পূর্বপাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। নিরাপত্তাহীনতা কেন? এটা একটা সঙ্গত প্রশ্ন। শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নয়, অর্থনীতি, শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রেই তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান অবহেলিত ও উপেক্ষিত ছিল। তার জন্য তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ও কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক নেতারাই দায়ী ছিলেন। বিস্তারিত প্রেক্ষাপট বর্ণনা বা মূল্যায়ন এখানে সম্ভব নয়। পাকিস্তানিদের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিক্রিয়ায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে দারুণ সচেতনতা সৃষ্টি হয়। সে সময় পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন নেতা শেখ মুজিবুর রহমান শক্ত ও দূরদর্শী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আ’লীগের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবিনামা উপস্থাপিত হয়েছিল। ওই দাবিনামা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী লীগ যথাযথ সময় উপযুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা জনগণের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের নির্বাচিত শীর্ষতম নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালে একটি বিশাল ছাত্র জনতার জনসভায় তৎকালীন অগ্রণী সংগ্রামী ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টির পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনন্য ও অনবদ্য। আধুনিক বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা একটি রাষ্ট্র বা জাতিরাষ্ট্র জন্ম দিয়েছেন। যেমন- গান্ধী ও নেহরু একই সাথে ভারতের নেতা, এনক্রুমা ঘানার নেতা, কেনিয়াত্তা কেনিয়ার নেতা, সুকর্ন ইন্দোনেশিয়ার নেতা, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের নেতা ও জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের নেতা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের উত্তপ্ত ঘটনাবহুল ইতিহাস এখানে বর্ণনা করার জায়গা নেই। প্রধানতম ঘটনা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি জাতির ওপর বহুমুখী আক্রমণের সূচনা করে। মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনা কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। বঙ্গবন্ধুর পরোক্ষ এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রথম নিজের নামে পরে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রত্যক্ষ স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালি জাতিকে ইতিহাসের নতুন একটি রাস্তায় স্থিত এবং বেগবান করে। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম প্রেরণা। মুক্তিযুদ্ধকালীন বিখ্যাত একটি গানের লাইন এরকমÑ ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে মোরা যুদ্ধ করি…’। ওই একটি ফুল কী ছিল? বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, গণতন্ত্র অথবা বঙ্গবন্ধু? মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে । আরো ২৫ দিন পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তার জীবনের তৃতীয় অংশ শুরু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে তিনিই ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত তৎকালীন বাংলাদেশের জন্য কঠিন, কঠোর, নির্মম, কষ্টদায়ক, উদ্বেগজনক ও সঙ্কটময় ছিল। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সরকারবিরোধী চাপ যেমন ছিল, তেমনি সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী চাপও প্রচণ্ড ছিল। সাধারণ ভাষায় যাকে ষড়যন্ত্র বলা হয়, তেমন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ছিল না, এটা বলা যাবে না। সরকারের ব্যর্থতাও ছিল। বঙ্গবন্ধু একাধারে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ছিলেন। বিভিন্ন কারণে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর, বিশেষত সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যে তার প্রতি আংশিক বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল। গোয়েন্দা বাহিনীগুলো তাকে অবহিত করতে পেরেছিল কি না, সেটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না। সে যা হোক, সবকিছুর মিশ্র ফলশ্রুতিতে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু নিহত হন। মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম ও আরো কোটি কোটি মানুষ বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার প্রতি আজ সম্মান জানাচ্ছে। লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি [email protected]

0Shares