বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনালে পাকিস্তান
আল আমিনের করা ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বল। শহীদ আফ্রিদি বল ভাসিয়ে দিলেন বাতাসে। শর্ট কভারে দাঁড়ানো মুশফিকুর রহিম ক্যাচটি জমাতে পারলেন না তাঁর বিশ্বস্ত হাতে। বাংলাদেশ অধিনায়কের এ ব্যর্থতা ছুঁয়ে গেল গ্যালারির দর্শকদেরও। কয়েকজন তো আবেগ সামলাতে না পেরে কেঁদেই দিলেন।
তখন মনে হচ্ছিল, এই ক্যাচ মিসটাই হয়তো হারিয়ে দেবে বাংলাদেশকে। কিন্তু না, জীবন ফিরে পাওয়াটা আফ্রিদি বেশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারলেন না। আসলে কিছু দিন ধরে কী যে হচ্ছে, ভালো খেলতে খেলতেও কোথায় গিয়ে যেন খেই হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ। ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই বড় পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। আজও তা-ই হলো। ৩ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। যে পরাজয় দিয়ে বাংলাদেশ ছিটকে গেল এশিয়া কাপ থেকে। ফাইনালে চলে গেল পাকিস্তান।
৩২৬ করেও এমন পরাজয়কে কী বলা যায়? তবে কি ভাগ্যের কাছেই হারল বাংলাদেশ? পরিসংখ্যান-ইতিহাস তো বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। কেননা এত রান তাড়া করে কখনোই জেতেনি পাকিস্তান। অন্যদিকে ৩০০-এর বেশি স্কোর গড়ে বাংলাদেশও কখনো হারেনি। আজ যেন সব ইতিহাস মিথ্যে হয়ে গেল।
অথচ ৩২৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়ার পর বোলিংয়েও পাকিস্তানকে ভালোভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৪টি মেডেন পাওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত উইকেটের দেখা মিলছিল না। ২০.৪ ওভারে পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্রেক থ্রুটি এনে দিলেন মুমিনুল হক। মুমিনুলের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে মোহাম্মদ হাফিজ করেছেন ৫২। এরপর মিসবাহ-উল-হকও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি উইকেটে। ৪ করা পাকিস্তান অধিনায়ককে বোল্ড করেছেন সাকিব আল হাসান। এরপর শোহেব মাকসুদকেও ফিরিয়েছেন মুমিনুল। ২০.৪ থেকে ২২.৫—এই ১৪ বলে পাকিস্তানের ৩ উইকেটের পতন। এরপর অবশ্য আহমেদ শেহজাদ ও ফাওয়াদ আলম বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ১০৫ রান (৯৪ বলে)। শেহজাদ ছুঁলেন পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১০৩ করে এ ডানহাতি বোল্ড হয়েছেন আবদুর রাজ্জাকের বলে। এরপর মাহমুদউল্লাহর বলে ফিরেছিলেন আবদুর রেহমানও।
এরপর সেই আফ্রিদি-তাণ্ডব। ভারতের ম্যাচের মতো আজও ব্যাটে ঝড় তুললেন এ অলরাউন্ডার। মাত্র ১৮ বলে করলেন ফিফটি। সাকিবের হাতে রানআউট হওয়ার আগে আফ্রিদি করলেন ৫৯। ছোট্ট অথচ ঝোড়ো ইনিংসটার পাশে জ্বলজ্বল করল ৭টি ছয় ও ২টি চার। আফ্রিদি-ঝড়ের সঙ্গে ফাওয়াদের ৭৪ রানের ইনিংসটির কথাও বলতে হবে। বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ফাওয়াদ-আফ্রিদির ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তোলা ৩৩ বলে ৬৯ রান। এর মধ্যে ৫৯ রানই আফ্রিদির।
বৃথা গেল এনামুলের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। বৃথা গেল ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহিম আর মুমিনুল হকের ফিফটি। বৃথা গেল মাঠে ফিরেই করা সাকিবের ১৬ বলে ৪৪!
কবে আবার সুদিনের হাসি ফিরবে বাংলাদেশের মুখে?প্রথম আলো