Wednesday - May 1, 2024 7:16 PM

Recent News

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’র মায়ার খেলা’য় মুগ্ধ দর্শক

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’র মায়ার খেলা’য় মুগ্ধ দর্শক

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস-বাফা’র মায়ার খেলা মুগ্ধ করলো দর্শকদের। বাফার আয়োজনে গত শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে কুইন্স থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলো কবিগুরু রবীন্দ্র নাথের গীতিনাট্য মায়ার খেলা। জমকালো আয়োজন মায়ার খেলায় অংশগ্রহণকারি বাংলাদেশী-আমেরিকান নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের দৃিষ্টনন্দন অভিনয় শৈলী আর অঙ্গভঙ্গির নান্দনিক কৌশল ছিল বেশ উপভোগ্য। একই অনুষ্ঠানে বাফার কৃতি শিক্ষার্থী অন্তরা সাহাকে তার দীর্ঘ সাধনার ‘গ্রাজুয়েশন’ সার্টিফিকেটও হস্তান্তর করা হয়।অনুষ্ঠানের মঞ্চ সজ্জা ছিলো চোখে পড়ার মত। এ যেন, আঁধারের বুক চিরে হালকা আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়া একটি মঞ্চ। জো¯œালোকে ¯œাত হওয়া মায়াবতি মায়া এবং মঞ্চ নামক এ মর্তে নেমে আসলেন মায়াকুমারীগণ। যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘মায়ার খেলা’।বিভিন্ন পর্বে অনুষ্ঠিত এ নৃত্যনাট্যে অংশ নেয়া অভিনয় শিল্পীদের মধ্যে ছিল মায়াবতি মায়াদের দৃষ্টিনন্দন নৃত্য পরিবেশনা আর অসাধারণ সুর-ছন্দের উপস্থাপনা। বাফা’র প্রযোজনা ও সার্বিক তত্বাবধানে ‘মায়ার খেলা’র অভিনয় শিল্পীদের সুনীপুন অঙ্গভঙ্গি আর নান্দনিক পরিবেশনা ছিল বেশ উপভোগ্য। তরুণ-তরুণী কিংবা যুবক-যুবতিদের প্রেম, দ্রোহ, ভালোবাসা আর ব্যর্থতার বেদনা নির্ভর এ নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন অনেক কঠিন। সেই কঠিন বাস্তবতাকে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ও পর্বে এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন অংশগ্রহণকারিরা। কবিগুরুর এই সৃষ্টিকে নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে অসাধারণ নৈপুণ্যে মঞ্চে তুলে ধরেন বাফা’র গুণী নৃত্য পরিচালক-প্রশিক্ষক অনুপ কুমার দাস। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার দীর্ঘ অনুশীলন শেষে শৈল্পিক নৃত্য পরিবেশনা দেখতে আসা দর্শকদের উপস্থিতিতে নিউইয়র্কের কুইন্স থিয়েটার মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বর্ণিল এ সাংস্কৃতিক উৎসবে বাফার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক, প্রবাসে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা যোগ দেন। প্রাণভরে উপভোগ করেন পিন পতন নীরবতায়। মুগ্ধ হন মায়া’র খেলায়।ভালোবাসা, পাওয়া না পাওয়ার বেদনা কেবল শুধুই যন্ত্রণা। এই অসামান্য যন্ত্রণাকে নানা ঘটনা আর পরম্পরার মধ্য দিয়ে বোধগম্য করে তুলে ধরা হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার ‘মানসী’ কাব্যে নর-নারীর সর্ম্পক নিয়ে যেমনটি ভেবেছেন, ‘মায়ার খেলা’ যেন তারই এক প্রতিচ্ছবি।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তরুণ প্রজন্মের নৃত্য শিল্পী অন্তরা সাহাকে ঘিরে। এ নৃত্যশিল্পীর ‘ফার্স্ট গ্রাজুয়েশন সিরিমনি’ নির্ভর দৃষ্টিনন্দন নৃত্য পরিবেশনা পুরো আয়োজনে এনে দেয় নুতন মাত্রা। দীর্ঘ সাধনার এবং ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ডিগ্রি পেয়ে উচ্ছ্বসিত অন্তরা শাহ তুলে ধরেন তার অনুভূতির কথা। অন্তরার বাবা আশুতোষ সাহা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অন্তরার এ পর্যন্ত আসার কাহিনী তুলে ধরেন ছোট বোন অনিকা সাহা ও ভাই অনুপ সাহা।প্রজপ্রবাসে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে অত্যন্ত পরিপাটি রূপে তুলে ধরায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অনুষ্ঠানের দর্শকসারিতে থাকা জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান।
নৃত্যনাট্য প্রেমিরা বলেন, বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্রচনাবলী নিয়ে ‘মায়ার খেলা’ নাট্য’র মঞ্চায়ন চলছে শত বছর ধরে। যা বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে। ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস-বাফা’র আয়োজনে নিউইয়র্কে মঞ্চায়ন হওয়া এ ‘মায়ার খেলার’ নৃত্য-নাট্যই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ওয়েল কেয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার সালেহ আহমদ, লেখক ফেরদৌস সাজেদীন এবং মোশারফ হোসেন।
এ অসাধারণ নৈপুণ্যের নেপথ্যের কারিগর অনুপ কুমার দাস ও ফরিদা ইয়াসমিনকে ধন্যবাদ জানান অনেকে। বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’র এ পেশাদারিত্ব মনোভাবই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মঞ্চে। তারা বলেন, এ ঐতিহাসিক আয়োজন মাইলফলক হয়ে থাকবে প্রবাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে।‘মায়ার খেলা’ নৃত্যনাট্যের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন অনুপ কুমার দাস। বাফার সার্বিক তত্বাধানে মায়ার খেলায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মার্জিয়া স্মৃতি, পিয়াল হোসাইন, মৃদুলা আলম, কানু দেব, পল্লব সরকার। সখি গ্রুপে সানজিদা ইসলাম, নুজহাত ফাইজা, ঈষাণী চৌধুরী, অন্তরা সাহা, আনিকা কাওসার, মিথুন দেব। মায়া কুমারী গ্রুপে নিরমা গোলদার, নঈরিত, ঈষা, তিশা, কৃষ্ণা, আনিকা, নির্জা, রিতু, অর্পিতা। অলোকের এই ঝর্ণাধারায় ছিলো চৈতন্য, রুচি, শ্রেয়া, যারা, পারোমিতা, শারোনি, নির্জা, আবৃত্তি, অদিতি, মায়া, অমরিতা, নোরা, রিয়া, কথা, তুলসি, দিবা, অপ্সোরা, ফায়জা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি নান্দনিক ভাবে পরিচালনা করেন গোলাম মোস্তফা ও শামিম আরা বেগম।অনুষ্ঠানটির স্পন্সর ছিল ল অফিস অব এইচ ব্রুস ফিসার, সিলেট মটর্স, ব্যারিষ্টার ইসরাত সামি, রূপালী ট্রাভেলস এবং অপটিমাম টিউটোরিয়াল। মিডিয়া পার্টনার ছিল ঠিকানা, বাংলা পত্রিকা, টাইম টেলিভিশন।

0Shares

COMMENTS