Thursday - May 2, 2024 6:19 AM

Recent News

প্রত্যাবর্তন বিষয়ক নোট-প্রস্তাব

প্রত্যাবর্তন বিষয়ক নোট-প্রস্তাব

আহমেদ মূসা : গতকাল ২৮ অক্টোবর এসেছি আমার শালিক-খঞ্জনা ও কার্তিক-নবান্নের দেশে। লেখার কাজে দীর্ঘদিন থাকার ইচ্ছে। নতুন বই এবং ফেইসবুক পেজ ‘গণবানীর সন্ধানে’র জন্যও ব্যক্তিগত লাইব্রেরির সহায়তা প্রয়োজন । বইমেলা শেষ করে যাবার ইচ্ছে, যদি শরীর ও পরিস্থিতি সমস্যা না করে। এখন থেকে প্রতিবছর এই রুটিন মেনে চলার ইচ্ছে রয়েছে। আমেরিকায় বসে পড়া ও নোটকরা এবং দেশে বসে লেখা ও বইপ্রকাশ। আসার আগে ফুসফুসে স্টেমসেল থেরাপি নিয়েছি ১৭ ও ১৮ অক্টোবর; আমার মূল ডাক্তার ও ফুসফুসের বিশেষঞ্জ ডাক্তারের পরামর্শ উপেক্ষা করে। নেবার পর অবশ্য তারা তেমন কিছু বলেননি। চিকিৎসা-বিজ্ঞানের এই নতুন অধ্যায় আমেরিকায় অবৈধ না হলেও সরকার-অনুমোদিত নয় এখন পর্যন্ত। তবে ঝুঁকি নেই। বরং অবস্থা একটু ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই বয়সে ফুসফুসের ক্ষমতা যেখানে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ থাকার কথা আমার সেখানে ৩০ শতাংশের মতো। নতুন চিকিৎসার কারণে ক্ষমতা একটু বাড়লেও আমার জন্য অনেক। অবশ্য চলমান মেডিসিন-চিকিৎসাও আগের মতোই চলবে।ঠান্ডা-ধুলা-বায়ুদূষণ থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকতে হয়।
চলাফেরা করতে হয় শরীরের সঙ্গে পরামর্শ করে। এরমধ্যে লেখার কাজটাই সাধ্যমতো চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় অনেক জায়গায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হয় না, সামাজিকতা রক্ষা করা হয় না। কেউ কেউ ভুল বোঝেন। কিছুই করার নেই। একই কারণে খুব জরুরি ছাড়া চলাফেরার ইচ্ছে নেই।

*প্রত্যাবর্তন নোট – ১
বেশ কয়েকবছর পর ২০১৬ সালের এপ্রিলে দেশে ঢোকার সময় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দ্রুতই হয়েছিল। তবে, এয়ারপোর্ট কাস্টমস-এ সব চেক করে পাসপোর্টে সিলমারার কাজেরত অফিসারের সামনে আমার ডাক পড়লে, বাংলাদেশে অবস্থানের ঠিকানা-সম্বলিত ফর্মটি তার হাতে তুলে দেওয়ার সময় সম্ভাষণ জানিয়ে বলি,
-আপনি ভালো আছেন?
এটা আমি করেছিলাম একটু বাজিয়ে দেখার জন্য। পৃথিবীর যেখানেই গেছি, সংশ্লিষ্ট অফিসাররা যাত্রীদের হাই-হ্যালোর পাশাপাশি কুশলও জিজ্ঞেস করেন। বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে কল্যান কামনা করেন। আমার কৌতুহল ছিল হালের ডিজিটাল বাংলাদেশে সেই বাতাস কিছুটা হলেও লেগেছে কি না। কিন্তু তিনি আমার কুশল-প্রশ্নের ধারে-কাছে না যেয়ে ফর্মে চোখ বুলিয়ে বললেন,
-এখানে তো ফোন নাম্বার দেননি।
এরপর বিরক্তিসহকারে আমার দিকে কাগজটিঠেলে দিলেন। আমি ফোন নাম্বার লিখে তাকে কাগজটি দিয়ে বললাম,
-আপনাদের ফর্মে ফোন নাম্বার দেওয়ার কোনো কথা নেই। আলাদা একটা ঘর থাকা উচিত।
এতে তিনি আরো বিরক্ত হয়ে কাগজে চোখ বুলিয়ে বললেন,
-থানার নাম কই? থানার নাম লিখে দেন।
-বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা কোন থানার অধীনে আমার তো জানা নেই। অনেকদিন পর দেশে এসেছি। এরমধ্যে অনেক থানা হয়েছে..
– থানার নাম লাগবে।
-কিন্তু ফর্মে তো একথা উল্লেখ নেই। এখানেও আলাদা ঘর থাকা উচিত ছিল। তা হলে আপনার সামনে আসার আগে কারো কাছে জেনে নিতাম। আমি কারো কাছে ফোন করে জেনে দিতে পারি। কিন্তু এই ভোররাতে এজন্য কাউকে ফোন করা ঠিক হবে? তারচেয়ে আপনি একটু সাহায্য করেন। থানার নামটা বলেন, আমি লিখে দিচ্ছি।
তিনি তখন পাশের এক অফিসারকে জিজ্ঞেস করলেন। সেই অফিসার বললেন। আমি লিখে দিয়ে বললাম,
-দেশে থেকেও যে তথ্য আপনি জানেন না, আমি কী করে জানব?
আমেরিকা ফেরত যাত্রী না হলে হয় তো আমাকে আরো অপদস্তের মুখোমুখি হতে হতো। বেশকিছু মূল্যবান সময় ও ধৈর্যের অপচয় ঘটিয়ে দেশে ঢুকতে হয়েছিল। দেশে ঢুকেছিলাম মন খারাপ করে। অথচ, তার কতক্ষণ আগেও কত আনন্দেই না ছিলাম।

*প্রত্যাবর্তন নোট – ২
এবার কাস্টমস পার হওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট অফিসার ছিলেন একজন মহিলা। ডাক পড়ার পর আমি তার সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। প্রকাশ্যে তো বটেই, মনে-মনেও সেই সালাম নিয়েছেন কি না সন্দেহ। নিলে বুঝতে পারতাম। তাকিয়ে অন্তত মাথা নাড়তেন। আমি নিজে সালাম যথাযথ ভাবে গ্রহণ করে জবাব দেই। লোক-দেখানোভাবে নয়। ফেসবুকে অনেকে ইনবক্সে সালাম দেন। আমি সালাম নিই। কিন্তু অনেকসময় সেটা লিখে সালামদাতাকে জানানো হয়ে উঠে না। অনেকটা চিঠির মতো। চিঠিতে সালাম দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু পত্র-প্রাপককে লিখে ওয়ালাইকুম সালাম জানাতে হয় না। লেখাটা বাধ্যতামূলক নয়ও, যদি সালাম পরস্পরের ওপর আল্লাহতায়ালার রহমত নাজিলের উদ্দেশ্যে দোয়া হয়ে থাকে। আনুষ্ঠানিকতা প্রদর্শনের জন্য হলে হলে ভিন্নকথা।
এবার ফর্মে ফোন নাম্বার লেখা ছিল। কিন্তু যথাসময় থানার নাম মনে করতে পারছিলাম না। ফুসফুসের সিওপিডি রোগীর একটি অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে, হঠাৎ-হঠাৎ কিছু তথ্য সাময়িকভাবে ভুলে যাওয়া। পরে অবশ্য মনে পড়ে। কারসঙ্গে আত্মীয়তার কী সম্পর্ক প্রায়ই তা ভুলে যাই, কিংবা হিসেব করে বের করতে সময় লাগে। মাথায় কোনো ভুল তথ্য ঢুকে গেলেও সেটাই পাক খেতেকেতে বার বার ভুল করায়। থানার ক্ষেত্রে অবশ্য অন্য বিষয়ও হতে পারে। বাংলাদেশের কিছু থানার ভীতিকর সংবাদ পড়তে হয় বলে আমার মস্তিষ্ক হয় তো থানাকে ভালোভাবে গ্রহণ করে না। থানার নাম লুকিয়ে রাখে। সৌভাগ্য যে, এবারের অফিসার থানার নাম লিখতে বলেননি।
যাহোক, এবারের অফিসারটিও সালাম-কুশলের ধারে-কাছে গেলেন না। অবশ্য কাজটি তিনি আরোদ্রুত কওে দিলেন বিরক্তিমাখা অন্ধকারাচ্ছন্ন মুখে। একধরনের অপমান ও হতাশায় মন খারাপ করে ঢুকলাম দেশে।
এবার আমি খুব দরকারী কিছু প্রস্তাব রাখতে চাই। এক, বহু সরকারী কর্মকর্তা বিনাদরকারে সরকারের টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করে বস্তুত প্রমোদ-শপিং সারেন। কেউ কেউ তাদের অভিজ্ঞতা ফেরার সময় এয়ারপোর্টেই রেখে আসেন। কেউ কেউ অভিজ্ঞতা প্রয়োগের সুযোগই পান না। কারো কারো অভিজ্ঞতা প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও উৎকচের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অব্যবহৃত থাকে অভিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাস্টম অফিসারদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন এয়ারপোর্টে পাঠানো যেতে পারে। দুই, দেশি-বিদেশি যাত্রীদের স্থান-কাল-পাত্রভেদে Ñ আপনি কেমন আছেন, ওয়েলকাম ব্যাকহোম, ভালো থাকুন, শুভ বিদায় প্রভৃতি ধরনের সম্ভাষণে অফিসারদের আপত্তি বা আলস্য থাকলে একটি সফটওয়ার এমনভাবে তৈরি করা, যাতে যাত্রী কাস্টমসের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানো থেকে শুরু করে বিদায় পর্যন্ত সম্ভাষণগুলি যান্ত্রিকভাবে উচ্চারিত হতে থাকবে। তিন, বেশকিছু টিয়া পাখীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শব্দগুলি শিখিয়ে দেওয়া, যেগুলি যথাসময়ে যাত্রীদের যথাযথ সম্ভাষণগুলি জানাবে। হুমায়ূন আহমদের এক নাটকের টিয়া পাখীকে শেখানোর পর পাখীটি যে-ভাবে উচ্চারণ করতো, ‘তুই রাজাকার’।
সবার কুশল কামনা করছি।

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর – ২০১৭
ঢাকায় ফোন নম্বর ০১৭৩১৮৬৯০৩৭
ওয়েবসাইট ঠিকানা-

https://sites.google.com/view/sreejonkal

0Shares