Wednesday - May 1, 2024 7:14 PM

Recent News

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ ১লা নভেম্বর, প্রস্তুতি চূড়ান্ত

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারি সংলাপ ১লা নভেম্বর, প্রস্তুতি চূড়ান্ত

মিজানুর রহমান : সব প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। আগামী ১লা নভেম্বর বুধবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ৬ষ্ঠ অংশীদারি সংলাপ। ৩ দিন বিরতি দিয়ে ওই সংলাপ শেষ হবে ৫ই নভেম্বর। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এটি হবে বাংলাদেশের তৃতীয় বৈঠক। তবে প্রতিনিধিত্বের বিচারে এটাই হতে যাচ্ছে কর্মকর্তা পর্যায়ের সর্বোচ্চ বৈঠক। ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দিতে ঢাকা আসছেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফোর্থ র‌্যাংকিং ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন ব্যুরো ও দপ্তরের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদ মর্যাদার অন্তত ৪ জন কর্মকর্তা আসছেন। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ দূতাবাসের পদস্থ কূটনীতিকরাও এতে অংশ নিচ্ছেন। ভিন্ন ফর্মেটে অনুষ্ঠেয় এবারের অংশীদারি সংলাপে রাজনীতি, সুশাসন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা সংকটই মুখ্য আলোচ্য হতে যাচ্ছে বলে এরইমধ্যে আভাস মিলেছে। সূত্র বলছে, ওয়াশিংটনের তরফে ওই চার ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জানার চেষ্টা রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার অস্বস্তি ছিল। তবে ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে গোটা বিশ্ব। আসন্ন নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে আয়োজনে সরকার, স্টেক হোল্ডার এবং বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগীরা কাজ করছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম বৈঠক হয়েছিল গত মে মাসে। ঢাকায় টিকফা’র আওতায় হয়েছিল সেই বৈঠক। দ্বিতীয় বৈঠকটি হয়েছে ওয়াশিংটনে গত ২রা অক্টোবর। সেটি ছিল সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা সংলাপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আমেরিকাস সেই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এবার দ্বিপক্ষীয় পার্টনারশিপ চুক্তির অধীনে অনুষ্ঠেয় পার্টনারশিপ ডায়ালগ বা অংশীদারিত্ব সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। তার সঙ্গে থাকবেন সরকারের অর্থ, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, আইন, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও বিনিয়োগ বোর্ডের পদস্থ কর্মকর্তারা। গত বছর জুনে ওয়াশিংটনে সর্বশেষ পার্টনারশিপ ডায়ালগটি হয়েছিল। ওবামা প্রশাসনের আমলে মার্কিন আন্ডার  সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব  নেয়া পেশাদার কূটনীতিক থমাস এ শ্যানন সেই আলোচনায় দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের  নেতা ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব  মো. শহীদুল হক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন সঙ্গতকারণেই অতীতের ধারাবাহিকতা থাকবে এবারের সংলাপে। সেখানে দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরো সুসংহত এবং শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে  যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে তা দূরে ঠেলে আগামী সম্পর্ক কিভাবে সুদৃঢ় করা যায় তা নিয়ে কথা হবে। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব নিয়ে গর্বিত। বিগত সংলাপে  দেশটির তরফে এমনটি বলা হয়েছে উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানে অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, উচ্চশিক্ষা, কৃষি সহযোগিতা, ব্লু ইকোনমি, শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও সহিংস উগ্রবাদ, আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ৩ পর্বের ওই আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব প্লিনারি সেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদকে ধারণ করে ২০২১ সাল নাগাদ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ও কৌশলের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। এবার আরো বিস্তৃতভাবে  সেটি তুলে ধরার প্রস্তুতি চলছে। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই কমবেশি আলোচনা হবে শহীদুল ও শ্যাননের নেতৃত্বাধীন ঢাকার সংলাপে। তবে সেখানে রোহিঙ্গা সংকট বিশেষ করে এ ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার সম্ভাব্য উত্থান চেষ্টায় গত বছর ঢাকাকে যেভাবে টার্গেট করা হয়েছিল, চলতি বছরজুড়ে সরকারের উচ্চমাত্রার সতর্কতায় উগ্রপন্থিরা প্রায়  কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। উগ্রপন্থা দমন এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা দুনিয়া বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে বিদ্যমান উদ্বেগের মধ্যেই বাংলাদেশের ঘাড়ে বড় বোঝা হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা সংকট। রাখাইনে রোহিঙ্গা সমপ্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূলে তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে বর্মী বাহিনী। জাতিসংঘের হিসাব মতে চলমান নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে আগে থেকে রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মিয়ানমার নাগরিক। সব মিলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সীমান্তে রোহিঙ্গা স্রোত এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ চাইছে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থায় পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ নিজ বসতভিটায় ফেরত পাঠাতে। এ সংকট প্রলম্বিত হলে বাস্তুচ্যুত এসব লোকজন গোটা এশিয়া তথা বিশ্বের নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে অভিমত দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। নিরাপত্তা উদ্বেগ কমাতেও ওয়াশিংটনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। পার্টনারশিপ ডায়ালগে বিদ্যমান সহযোগিতার বিষয়টি আরো বিস্তৃত আলোচনা হবে আশা করছে সেগুনবাগিচা। এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর ঢাকায় নিজ বাসায় বন্ধুসহ নির্মমভাবে খুন হন মার্কিন মিশনের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নানের খুনের ঘটনা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিয়েও সংলাপে কথা হতে পারে। এ নিয়ে ঢাকার তরফে ওয়াশিংটনকে পুরো পরিস্থিতি ব্রিফ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও  কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুবিধা বর্ধিতকরণ এবং বাংলাদেশে দেশটির আরো  বেশি বিনিয়োগসহ সার্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে তাগিদ থাকবে ঢাকার। 
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রতিবেশীদের সক্রিয় ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র: এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বশেষ ঢাকায় ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গণমাধ্যমকে বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে  রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমার কোনো সাড়া না দিলে দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ভাবছে বলেও জানান বার্নিকাট। ওইসিডি ও ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের গত বুধবার ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। সেখানে ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিস্তারিত তুলে ধরেন। মার্কিন দূতসহ অন্য দূতরা সেই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। মানবজমিন

0Shares

COMMENTS