Friday - May 3, 2024 10:30 PM

Recent News

যথাযোগ্য মর্যাদায় স্থায়ী মিশনে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালিত

নিউইয়র্ক, ১৬ আগস্ট: ১৫ই আগস্ট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গের ৩৫তম শাহাদাৎ বার্ষিকীর এ শোকের দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে। [nggallery id=21]

যুক্তরাষ্ট্র সফররত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু,এমপি মিশন প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলনের মাধ্যমে দিনটির সূচনা করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকদের বুলেটে শহীদ বঙ্গবন্ধু ও একই সাথে শাহাদাৎ বরণকারী তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত এবং তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উত্তোরত্তোর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী এবং মিশনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। ড. মোমেনের পরিচালনায় মোনাজাত এবং এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সকালের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

বিকেলে জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ীমিশনে কর্মরত কূটনীতিক, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আওয়ামী নেতাকর্মী এবং প্রবাসী বাঙালীদের অংশগ্রহণে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, এমপি বলেন, “১৫ই আগস্টের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর ইপ্সিত লক্ষ্য স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে”। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন – নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের জন্য সেই কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের রায় বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, শীঘ্রই অন্যান্য আসামীদের দেশে আনার ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট।
স্থায়ী মিশনের নূতন ভবনে বিকেলের অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি এমপি প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন যথাক্রমে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, ইকনমিক মিনিস্টার মোঃ নজিবুর রহমান এবং কাউন্সিলর মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। এসময় শহীদদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় কারাবরণ করেছেন কিন্তু কখনও মাথা নত করেননি প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রকৃত অনুরাগী। একটি গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়ে তুলতে তিনি বাঙালী জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

১৯৭২ সালে পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দিল্লীতে যাত্রাবিরতিকালে সকলে ছুটে গিয়েছিল এ মহান নেতাকে এক পলক চোখের দেখা দেখতে, ঘটনাটির স্মৃতিচারণ করে ভারতের স্থায়ী মিশনের উপস্থায়ী প্রতিনিধি মি. মানজিভ সিং পুরি (Mr. Manzeev Singh Puri) বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ারও একজন বড় মাপের নেতা ছিলেন”। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ শুধু যে একই ভৌগলিক অঞ্চলে অবস্থান করে তাই নয়, বরং উভয় দেশ একই ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও কৃষ্টির ধারাবাহিকতা বহন করে চলেছে।
বঙ্গবন্ধুর নামে সেদেশে একটি প্রধান সড়ক রয়েছে বলে উপস্থিত সুধীজনকে অবহিত করে তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি মি. এরটুগরুল আপাকান (Mr. Ertuğrul Apakan) শোকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর কাজগুলিকে স্মরণের আহবান জানিয়ে বলেন, তুরস্কের নেতা কামাল আতা তুর্কের মত বঙ্গবন্ধুর নামও তুরস্কে জাগরুক রয়েছে।

সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহ তার আলোচনায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে বলেন, তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তান কখনই চায়নি বাংলাদেশের মত গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সম্পূর্ণ ভিন্ন আদর্শের একটি দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে ১৯৭১ সালে ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে প্রদত্ত জাতির জনকের ভাষণটি পাঠ করেন জাকির হোসেন আরজু। আজকাল পত্রিকার সম্পাদক কবি দর্পণ কবির বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্বরিচত কবিতা আবৃত্তি করেন। কবি শামসুর রাহমান এবং নির্মলেন্দু গুণের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন যথাক্রমে মুমু আনসারি এবং ইভান চৌধুরী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় মিনিস্টার (কালচারাল) অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদকে সহযোগিতা করেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ। মোঃ নজরুল ইসলামের কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু এবং সিরিয়ার নাগরিক মি.ইয়াহিয়া খান কান এর বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ হয়।

0Shares

COMMENTS