Sunday - May 5, 2024 12:23 AM

Recent News

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার দাবিতে নিউইয়র্কে কন্স্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার দাবিতে নিউইয়র্কে কন্স্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ

ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ডেস্ক, নিউইয়র্ক: ‘ডিজিডিএফআই এবং এনএসআইয়ের মত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিয়োগ পাচ্ছে না কেন? অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে, ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সম-অধিকার থাকবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রশাসনে’। কিন্তু বাস্তবে ঘটে চলেছে একেবারেই উল্টো ঘটনা এবং নির্মম হলেও সত্য যে, আওয়ামী লীগকে সংখ্যালঘুরা সবসময় নিজেদের পরম বন্ধু করলেও গত কয়েক বছরের আচরণে তার কোনই প্রকাশ ঘটেনি। অধিকন্তু অন্যসকল সরকারের আমলের চেয়েও ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত হতে হয়েছে এখন’। এমন অভিযোগ করেছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক স্বপন দাস।

২৪ নভেম্বর শুক্রবার অপরাহ্নে ক্্ুইন্সে নর্দার্ন বুলেভার্ডে পুলিশের দেয়া বেষ্টনীর ভেতরে এবং পুলিশের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয় বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং সামাজিক-সংখ্যালঘুদের রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে। ‘টার্গেটেড কিলিং, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া’ শীর্ষক এই স্মারকলিপির কপি হস্তান্তর করেন যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের শীর্ষস্থানীয় ৩ নেতা নয়ন বড়–য়া, জেমস রয় এবং স্বপন দাস। এই স্মারকলিপির কপি দেয়া হয়েছে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র বিষযক কমিটির চেয়ারম্যান, ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার কংগ্রেসম্যান যোসেফ ক্রাউলি, কংগ্রেসওম্যান তুলশী গ্যাবোর্ড, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার, জার্মাণ দূতাবাস, ফ্রেঞ্চ দূতাবাস, সুইডেন দূতাবাস, নিউইয়র্কে ভারতীয় কন্সাল জেনারেল, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন এবং সার্ক সচিবালয়কে। 

বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য পরিষদের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারি শিতাংশু গুহ বলেন, ‘রামু, অভয়নগর, নাসিরনগর, মাধবপুর, রংপুর এবং অন্যান্য স্থানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে হামলা হয়েছে, সবগুলো একই ধরনের। পরিকল্পিতভাবে তা করা হয়। সবগুলোর ব্যাপারে দায়েরকৃত মামলায় তাদেরকেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে যারা ঐসব আক্রমণের শিকার। অর্থাৎ হামলাকারিদের রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন উল্টো আক্রান্তদেরকেই মামলায় অভিযুক্ত করেছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করাও হয়েছে।’ শিতাংশ গুহ অভিযোগ করেন, ‘কোন কোন ঘটনায় প্রকৃত কালপ্রিটকে গ্রেফতার করা হলেও কয়েকদিন পরই জামিনে মুক্তির ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ জনমতের চাপে দোষীরা ধরা পড়লেও পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এরফলে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন।’

অধ্যাপক স্বপন দাস অভিযোগ করেছেন, ‘অত্যাচার-নির্যাতনে অতীষ্ঠরা বিচার না পেয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছেন জীবনের নিরাপত্তার জন্যে। আর এভাবেই নিরবে বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুহীন করার সুদূর প্রসারি একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটানো হচ্ছে।’ঐক্য পরিষদের সাবেক সেক্রেটারি সুশীল সাহা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হচ্ছি হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা। অথচ সেই আওয়ামী লীগের আমলেই সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হচ্ছি আমরা।’

স্মারকলিপিতে সম্প্রতি পদত্যাগকারি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘এস কে সিনহার পদদত্যাগের নাটক আমরা অবলোকন করেছি। এস কে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের আগে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সবকিছু যাচাই করা হয় এবং তার কর্মাভিজ্ঞতা গুণেই ঐ পদে অধিষ্ঠিত হবার সুযোগ লাভ করেছিলেন। হিন্দুদের ভোটে কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুরোধে তাকে নিয়োগ করা হয়নি। কিংবা এস কে সিনহা হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন পর্যায়ের নেতাও ছিলেন না। অথচ তার কিছু কাজের জন্যে সমস্ত হিন্দু সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাড় করানোর জঘন্য একটি প্রয়াস দেখেছে গোটা জাতি।’ স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের একজনও সংখ্যালঘু ছিলো না। যদিও আমরা কখনোই শুনিনি যে, ঐ ঘাতকেরা যে ধর্মের লোক, সেই ধর্মের সকলকেই ঘাতক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।’

এ বিক্ষোভ সমাবেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরোধী নানা স্লোগান লেখা পোস্টার-প্লেকার্ড ছিল অংশগ্রহণকারিদের হাতে। ঐক্য পরিষদের পাশাপাশি শ্রীকৃষ্ণভক্তসংঘের নেতা ডা. প্রভাত দাস ও সুশীল সাহা, জ্যামাইকা হিন্দু কম্যুনিটির প্রিয়তোষ দে, পূজা উদযাপন পরিষদের ভজন সরকার, ঐক্য পরিষদের তপন সেন, মনিকা রায়ও ছিলেন। এনআরবি নিউজ

0Shares

COMMENTS