Sunday - April 28, 2024 6:35 PM

Recent News

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ওবামা বললেন যুদ্ধাভিযানে ইরাকে আমাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে

বাংলাপ্রেস,ওয়াশিংটন ডিসি থেকে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘ইরাকে আমাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। তাই সেখানে লড়াই বন্ধের পেছনে কেবল ইরাকের নয়, যুক্তরাষ্ট্রেরও বড় স্বার্থ আছে।’ ইরাকে মার্কিন বাহিনীর লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা উপলক্ষে গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ মন্তব্য করেন ওবামা।

নির্বাচনী প্রচারের সময় ২০১০ সালের ৩১ আগস্টের মধ্যে ইরাকে লড়াই শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওবামা। প্রতিশ্রুতি অনুসারে গত ১৮ আগস্ট মার্কিন বাহিনীর সর্বশেষ যুদ্ধসেনারা ইরাক ছাড়ে। আর সময়সীমার একেবারে শেষ দিনেই লড়াই সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওভাল অফিস থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত বক্তব্যে ওবামা বলেন, ‘অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম শেষ। এখন ইরাকের মানুষকেই তাদের দেশের নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব নিতে হবে।’ এ ঘোষণার ফলে ইরাকে মার্কিন সেনাদের সাড়ে সাত বছরব্যাপী লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটল। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ৪৯ হাজার ৭০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন থাকলেও তারা কোনো লড়াইয়ে অংশ নেবে না। কেবল ইরাকি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেবে। ১৬ মাসের জন্য পরিকল্পিত এ নতুন মিশনের নাম ‘অপারেশন নিউ ডন’। লড়াইয়ের সমাপ্তি উপলক্ষে ইরাক সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস গতকালই এ মিশনের উদ্বোধন করেছেন। ওবামা তাঁর বক্তব্যে ২০১২ সালের আগেই এই মিশন শেষ করে ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘আমাদের হাজার হাজার সেনা সেখানে প্রাণ হারিয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও আমরা এ যুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা মনে করি, এমন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে হলেও ইরাকে আমাদের দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। এখন সময় এসেছে পৃষ্ঠা ওল্টানোর।’ ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়ার ঘোষণা করে বলেন, ‘অনেক আমেরিকানের জন্য চরম অনিশ্চয়তার পরিস্থিতিতে আমি এ লড়াই সমাপ্তির ঐতিহাসিক ঘোষণা দিচ্ছি। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেকেই খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত এক দশকে যুদ্ধের কারণে আমরা নিজেদের উন্নতির ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে পারিনি। যুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করায় আমাদের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ কমেছে, বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। ইরাকে লড়াই শেষ করার পর এখন এসব ঘাটতি দূর করার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

ইরাকে লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘোষণার দিনে অবশ্য জয়-পরাজয়ের কোনো দাবি করেননি ওবামা। তবে তিনি স্বীকার করেন, মার্কিন বাহিনীর লড়াই শেষ হলেও ইরাকে সহিংসতার অবসান হয়নি। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের মার্চে ইরাক যুদ্ধ শুরুর মাত্র তিন মাস পরই যুদ্ধ জয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। এর ফলে পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ওবামা রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ইরাকি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কেবল ইরাকের জনগণই পারে তাদের দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। আমরা পারি কেবল তাদের সহায়তা করতে। আমি ইরাকিদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, লড়াই শেষ করলেও ইরাকের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।’ ইরাকে লড়াই করা সেনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানান ওবামা। তিনি বলেন, ‘সাড়ে সাত বছর আগে এই টেবিলে বসেই ইরাক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। আপনারা জানেন যে, আমি সে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলাম। গণতন্ত্রে এমন মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু ইরাকে লড়াই করা সেনাদের ত্যাগের বিষয়টি সব মতভেদের ঊধর্ে্ব। তাদের উন্নতির বিষয়টিকে সবার গুরুত্ব দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসের বক্তব্যকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো এ ভাষণ দিলেন ওবামা। এর আগে মেক্সিকো উপসাগরের তেল নিঃসরণ নিয়ে গত জুনে ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি।

0Shares

COMMENTS