Sunday - May 5, 2024 3:13 AM

Recent News

জাতিসংঘের সামনে যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমর্থনে সমাবেশে লতিফ বিশ্বাসঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে

নিউইয়র্কঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমর্থনে জাতিসংঘের সামনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠন, মুক্তযোদ্ধা সংসদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সমর্থন রয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্র চক্রান্ত এই বিচারের পথ রুদ্ধ করতে পারবে না। যারা ঘাতক পাকিস্তানীদের সহযোগী হয়ে দু লক্ষ মা বোনের ইজ্জত হরণ, হত্যা নির্যাতন লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকারের নির্বাচনী অঙ্গিকার।[nggallery id=7]

গত রোববার বেলা একটা থেকে ৪ টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপি অনুষ্ঠিত সমাবেশে ‘রাজাকারের আস্তানা-বাংলাদেশে থাকবে না’ সহ নানা শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে জাতিসংঘের সামনে অবস্থিত দ্যাগ হ্যামারশেল্ড পার্ক। ইউএসএ কমিটি টু সাপোর্ট দি ট্রায়েল অব বাংলাদেশী ওয়ার ক্রিমিনাল ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।

মুহুর্মুহু শ্লোগানের মধ্যে মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট দিয়েছে ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধপরাধীদের বিচার করতে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এই বিষয়টি স্পষ্ট ছিলো। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচন করেন।

সমাবেশ বিভিন্ন স্টেট থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন, জাসদসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন সংগঠন ব্যানার ফেস্টুনসহ উপস্থিত হলেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ তাদের অনুসারিরা উপস্থিত ছিল না। এবিষয়ে আয়োজকদের অনেকেই ক্ষোভ ও সমালোচনা করেন।

লতিফ বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। এখানে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। কোনো ধরণের হুমকি-ধামকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবে না। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের অবিস্মরণীয় বিজয়ে প্রমাণ হয়েছে, জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।

সরকার জনগণকে দেয়া ওয়াদা একে একে পূরণ করে যাচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, দলীয় স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে যে রায় হবে তাই কার্যকর হবে।
প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা যুক্তরাষ্ট্রেও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা শুধু বাংলাদেশের অভ্যস্তরে নয়, বিশ্বের যে সব দেশে বাঙ্গালীরা রয়েছেন সে সব দেশেও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে তিনি স্বাধীনতার স্বপেক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান।

যারা ‘দেশ গেলো দেশ গেলো, মানবাধিকার নেই’ বলে চিৎকার করছে তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, একাত্তরে কোথায় ছিলো আপনাদের সেই মানবাধিকার। অসহায় মা বোনদের পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিলেমিশে ধর্ষন করেছেন। লুটপাট করেছেন। মুক্তিযুদ্ধাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মা বাবাদের হত্যা করেছেন। আজ বিচার শুরু হতেই মানবাধিকারের ধোয়া তুলে রাজাকার আলবদর আলশামসদের বাচাতে চিৎকার করছেন। তিনি অসামপ্রদায়িক, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউজার্সি স্টেট আওয়ামী লীগ, জেনারেল ওসমানী স্মৃতি পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অব নিউ ইংল্যান্ড, বস্টন আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, স্বাধীনতার চেতনা মঞ্চ, শেখ হাসিনা মঞ্চ, যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিয়ানীবাজার মুক্তিযুদ্ধা পরিষদ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, পেনসেলভানিয়া স্টেট আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রচার কেন্দ্র, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিউইয়র্কসহ অসংখ্য সংগঠন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মুহুমুহু শ্লোগান দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে তাদের সমর্থনের কথা জানান।

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও সমাবেশের প্রধান সমণ্বয়কারী ড. নুরুন্নবীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ড. মহসীন আলী, চন্দন দত্ত, আব্দুর রহিম বাদশা, বঙ্গবন্ধু সংসদের সভাপতি লুৎফুল কবির, বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যান সংসদের সভাপতি বাবু রায় রমেশ নাথ, বঙ্গবন্ধু প্রচার কেন্দ্রের সভাপতি হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ-আমেরিকান এলায়েন্সের সভাপতি এম এ সালাম, জাসদ সভাপতি আব্দুল মোছাব্বির, নিউজার্সি স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি সুজন আহমদ সাজু, সাধারণ সম্পাদক শফিক উদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুন্নবী, ডেপুটি কমান্ডার ডাঃ মাসুদুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি আল আমীন, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, স্টেট শ্রমিক লীগের আজিজুল হক খোকন, আব্দুস সহিদ দুদু, বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির সাবেক সভাপতি বদরুল খান, যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হেলালুর করিম হেলাল, ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের এডভোকেট কামরুল ইসলাম, খুর্শেদ খন্দকার, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস, আপ্যায়ন সম্পাদক সিরাজ উদ্দীন সোহাহ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমণ্বয়কারী আইরিন পারভীন, উসমানী স্মৃতি পরিষদের নাজমুল ইসলাম চৌধুরী, নুরে আলম গেদু প্রমুখ।

সমাবেশের ঘোষণা পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্ঠান ঐক্য পরিষদ নেতা সিতাংশ গুহ। ঘোষণায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে এই বিচার সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করতে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।

প্রস্তাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সরকারী উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গিকার ব্যক্ত করে ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতার নিন্দা ও তা প্রতিহত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। সমাবেশে জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ ও ৭২ এর সংবিধান পুনর্বহাল ও তার বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান উদ্যেক্তারা।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই শিল্পী শহীদ হাসান, রথীন্দ্র নাথ রায় সহ স্থানীয় শিল্পীদের গনসঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘঠে। এছাড়া শিল্পী তাজুল ইমাম কর্তৃক যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের উপর গন থুথু নিক্ষেপ ছিল সমাবেশের অন্যতম লক্ষনীয় কর্মসূচী।

0Shares

COMMENTS