Sunday - May 5, 2024 8:35 AM

Recent News

নিউইয়র্কে এবিসিসিআই’র ‘বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার : বাংলাদেশে অর্থ আদান-প্রদান সহজীকরণ করতে হবে

নিউইয়র্কে এবিসিসিআই’র ‘বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার : বাংলাদেশে অর্থ আদান-প্রদান সহজীকরণ করতে হবে

সালাহউদ্দিন আহমেদ: ‘বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান এবং এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মঞ্জুর হোসেন বলেছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। যদিও তারা নাড়ীর টানেই দেশে অর্থ প্রেরণ করে থাকেন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিচেনায় রেখে তথা গ্লোবালাইজেনের যুগে বাংলাদেশে অর্থ আদান-প্রদান সহজীকরণ করতে হবে। কেননা এখন মানুষ শুরু দেশেই অর্থ প্রেরণ করেন না, প্রয়োজনে তারা দেশ থেকেও অর্থ আনেন। তাই রূপালী ব্যাংক লিমিটেড প্রবাসীদের সেবায় যে ঘটতি রয়েছে তা পূরণ করার চেষ্টা করবে। অপরদিকে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মোহামম্মদ আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, রূপালী ব্যাংক বাংলাদেশের শীর্ষ চারটি ব্যাংকের অন্যতম। জনগণের জন্য সার্ভিস প্রদানে এই ব্যাংকের ন্যূনতম ঘাটতি নেই। রূপালী ব্যাংক দেশবাসীর পাশাপাশি প্রবাসীদের সাথেও থাকবে।
নিউইয়র্কে এবিসিসিআই আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও এলজিআরডি মন্ত্রনালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মঞ্জুর হোসেন এবং মূল বক্তার বক্তব্যে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থানাপ পরিচালক (এমডি) মোহামম্মদ আতাউর রহমান প্রধান উপরোক্ত কথা বলেন। গত ৬ আক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ ব্যালিজিনো পার্টি হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. একে আব্দুল মোমেন এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান।
এবিসিসিআই’র নির্বাহী পরিচালক হাসানুজ্জামান হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিতের পিএস আ ন ম ফজলুল হক সহ আলোচনায় অংশ নেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) পরিচালনা কমিটির সভাপতি খাজা মিজান হাসান, প্রবীণ প্রবাসী নাসির আলী খান পল, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র সভাপতি ডা. আব্দুল লতিফ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জেবিবিএ’র যুগ্ম সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান। অনুষ্ঠান উপস্থপনায় ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, প্রবাসীদের স্বার্থ বিবেচনা করেই ‘বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণে প্রবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। কেননা, প্রবাসীদের অর্থেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অথচ প্রবাসীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে দেশে বিনিয়োগসহ অর্থ লেন-দেনে নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে প্রবাসীদের। তিনি বলেন, আমরা আমরা করছি দেশের অন্যতম ব্যাংক হিসেবে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড প্রবাসীদের সেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়েই রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাদের সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেমিনারটি সফল করার জন্য তিনি প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সেমিনারে রূপালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও আতাউর রহমান প্রধান বলেন, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে, ফলে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। তাই প্রবাসীদের সেবায় রূপালী ব্যাংক আরো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চায়। তিনি বলেন, বিগত দুই মাসে নিউইয়র্ক থেকে ২৭৩ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে গেছে। তারপরও সঠিক পথে অর্থাৎ প্রোপার চ্যানেলে দেশে অর্থ যাচ্ছে না বলেই রেমিটেন্সের হার কমে যাচ্ছে। অপরদিকে প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকা ঢাকা থেকে গ্রামে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দেশব্যাপী রূপালী ব্যাংকের ৫ শতাধিক শাখা রয়েছে এবং ব্যাংকের শাখা আরো বাড়ছে, ব্যাংকের কার্যক্রম অলাইনে যাচ্ছে। ফলে ২৪ ঘন্টা অর্থ লেন-দেনের ব্যবস্থা থাকছে। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক বা যুক্তরাষ্ট্রে রূপালী ব্যাংকের কোন শাখা বা প্রতিষ্ঠান নেই। আর নিউইয়র্কে রূপালী ব্যাংক নামে কোন প্রতষ্ঠান থাকলে তার সাথে বাংলাদেশের রূপালী ব্যাংকের কোন সম্পর্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, রূপালী ব্যাংক সেবার হাত বাড়িয়ে আগামী বছর প্রবাসীদের দৌড় গোড়ায় আসতে চায়।
আতাউর রহমান প্রধান বৈধ পথে অর্থ লেন-দের জন্য সচেতনা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বৈধ পথে অর্থ দেশে না গেলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কনসাল জেনারেল শামীম আহসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানো কমে যাচ্ছে। এটা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বিষয়। প্রবাসীদের সেবায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট সবসময় পাশে থাকবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে, বিদ্যুৎ খাত সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশে অনেক মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সহ সংশ্লিস্ট দেশগুলোর সরকারের বিভিন্ন নিয়ম-নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণের হার কমে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ প্রেরণ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ট্রাম্প প্রশাসনের কড়াকড়ি আইন, বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা, দ্রব্যমূল বৃদ্ধি প্রভৃতি ছাড়াও নতুন সমস্যার মধ্যে রয়েছে নতুন প্রজন্ম দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করছে আর এখানেই বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি সরকারের মধ্যেও নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে সরকারীভাবে অর্থাৎ বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানো কমেছে আর বেসকারীভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর হার বাড়ছে।
রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশী সমস্যা আছে, সমাধানও আছে। আবার সব সমস্যা আইন দিয়েও সমাধান করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য হুন্ডি বড় সমস্যা। তিনি বলেন, দেশের সমস্যার জন্য সরকার আর জনগণের মধ্যেকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। বাস্তবতার প্রয়োজনেই অর্থ আদান-প্রদান ব্যবস্থা পদ্ধতি সহজীকরণ করতে হবে। তিনি বলেন, নাড়ীর টানে প্রবাসীরা দেশে অর্থ প্রেরণ করেন ঠিকই। কিন্তু বৈধপথে সরকারীভাবে অর্থ প্রেরণ না হলে দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না, আর প্রবৃদ্ধি না বাড়ছে দেশের উন্নয়ন হবে না। তিনি বলেন, আসলেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ইমাজিং কান্ট্রি, বাংলাদেশ গ্রোইং কান্ট্রি। বাংলাদেশ অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। দেশ ডিজিটালাইজড হচ্ছে বলে অনেক কাজ সহজ ও দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রূপালী ব্যাংক প্রবাসীদের সেবায় পাশে থাকবে এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
আ ন ম ফজলুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছে। প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করছেন উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধির নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন প্রথমত: দেশের নারী সমাজ, দ্বিতীয়ত: কৃষক সমাজ আর তৃতীয়ত: প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজ।
নাসির আলী খান পল বলেন, প্রবাসীরা পরিবারের সদস্যদের চাহিদার কারণেই মূলত: দেশে অর্থ প্রেরণ করে থাকলেও প্রবাসীদের অর্থে দেশ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, এখন শুধু প্রবাস থেকে দেশে অর্থ যায় না, দেশ থেকেও আমেরিকায় অর্থ আসছে। আমেরিকায় কারো কারো ৫/৭টি বাড়ীও রয়েছে। এটা আশঙ্কার কথা। অপরদিকে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবী ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক’ রুটে সরাসরি বিমান চলছে না, আমরা ভোটাধিকার পাচ্ছি না।
খাজা মিজান হাসান প্রবাসীদের স্বার্থে সরকার ও ব্যাংকগুলোকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দেন।
ডা. আব্দুল লতিফ তার বক্তব্যে বৈধপথে দেশে অর্থ প্রেরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ফাহাদ সোলায়মান বলেন, নিউইয়র্কে অনেক মানি ট্রান্সমিটার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু তাদের সার্ভিসে আমরা সন্তুুষ্ট নই। একেক প্রতিষ্ঠানের একেক রেট। আস্থা রেখে কিভাবে দ্রুত সময়ে দেশে অর্থ পাঠানো যায় সেব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখা দরকার বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে ইউএস কংগ্রেসে বাংলাদেশ কোকাাস-এর চেয়াম্যান কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলীর পক্ষ থেকে দু’টি সাইটেশন প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রবাস জীবনের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি যথাক্রমে বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. দেলোয়ার হোসেন, মূলধারার রাজনীতিক ও ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ এবং সাবেক কূটনীতিক আব্দুর রাজ্জাক খানকে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড-এর পক্ষ থেকে প্ল্যাক প্রদান করা হয়।
সেমিনারের মূল পর্ব শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী নিলুফার বানু সঙ্গীত এবং মোরশেদ খান অপু সেতার বাজিয়ে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। এছাড়া কবিতা পাঠ করেন অধ্যাপক হাসান কবীর ডাবলু। শিল্পী অপুর সাথে সেতারে ছিলেন সজিব মোদক। আর তবলায় ছিলেন তপন মোদক।
উল্লেখ্য, সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির ইতিহাসে সাম্প্রতিককালে এমন সুন্দর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ উপস্থিত সবার প্রশংসা অর্জন করে।

0Shares

COMMENTS