Sunday - April 28, 2024 5:16 PM

Recent News

শতাধিক দেশের মিডিয়া কভার করলো বাংলাদেশী ট্যাক্সি ড্রাইভার আহমেদ শরিফের সংবাদ সম্মেলন

নিউইয়র্ক থেকে এনা : সারাবিশ্বের প্রধান প্রধান মিডিয়াগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল নিউইয়র্কে বাংলাদেশী ট্যাক্সি ড্রাইভার আহমেদ শরিফের সংবাদ সম্মেলনে। ২৬ আগস্ট ভর দুপুরের প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই নিউইয়র্ক সিটি হলের বারান্দায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। দুদিন আগে শ্বেতাঙ্গ এক আমেরিকান যুবক ছুরি নিয়ে হামলা করেছিলেন আহমেদ শরিফকে।

আহমেদ শরিফ মুসলমান-এটি জানার পরই মাইকেল এনরিট (২১) নামক যুবকটি ট্যাক্সির পেছনের আসন থেকে ৪৩ বছর বয়েসী আহমেদ শরিফের গলায় ছুরি চালায়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহব্বল আহমেদ শরিফ নিজেকে সামলে নিয়ে হামলাকারীর প্রতি আকুতি জানান তাকে না মারার জন্য। তাকে মেরে ফেললে তার ৪টি শিশু সন্তানের করুণ দশা হবে। তবুও সে থামছিল না। তার মুখে, নাকে, ঠোটে, কাঁধে এবং হাতে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে যুবকটি। সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ শরিফ ঠিকমত কথা বলতে পারছিলেন না গলায় ব্যান্ডেজ থাকায়। তিনি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারেন না। তাকে সহায়তা করেন সিটির ১৩ সহস্রাধিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের প্রতিনিধিত্বকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের প্রধান নির্বাহী ভৈরবী দেশাই। আহমেদ শরিফ বলেন, ২৫ বছরের প্রবাস জীবনের ১৫ বছরই কাটছে এই ড্রাইভিং পেশায়। এর আগে আর কখনো এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির শিকার হইনি। ভেবেছিলাম নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের নিরাপদ আশ্রয় স্থল। আহমেদ শরিফ এর আগে সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবাগের সাথে মিলিত হন। এ সময় তার সাথে তার স্ত্রী এবং ৩ সন্তান ছিলেন। মেয়র তাদেরকে আই লাভ নিউইয়র্ক লেখা কিছু টি শার্ট, খেলনা এবং পেন্সিল প্রদান করেন।

মেয়র বলেন, নিউইয়র্ক সিটি তথা আমেরিকার ইতিহাস-ঐতিহ্য অবশ্যই বর্ণিল এবং আমেরিকার মুল্যবোধ হচ্ছে সকল মানুষের সমঅধিকার। কিন্তু এরই মাঝে কিছু দুষ্ট লোক রয়েছে-যারা বাজে আচরণ করছে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে বিপন্ন করছে। মেয়র বলেন, তবে আমরা অপরাধীকে ছাড় দেব না। যে অপরাধ করেছে তার শাস্তি হবেই। মেয়র ব্লুমবার্গ বলেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, তিনি আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছি। উল্লেখ্য যে, গ্রাউন্ড জিরোর সন্নিকটে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৩ তলাবিশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণার পরই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সমগ্র আমেরিকায়। প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামার মত সিটি মেয়র ব্লুমবার্গও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। শতাধিক দেশের টিভি, রেডিও ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের এ সংবাদ সম্মেলন চলাকালে কয়েক ব্লক দূর গ্রাউন্ড জিরোতে চলছিল বিক্ষোভ সমাবেশ। একপক্ষ ধ্বনি দেয় ইসলামিক সেন্টারের পক্ষে এবং অপরপক্ষ এর বিপক্ষে। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলো অবশ্য বাংলাদেশী ট্যাক্সি ড্রাইভার আহমেদ শরিফের উপর হামলার ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে সংবাদ, নিবন্ধ এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনের পর ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের প্রধান নির্বাহী ভৈরবী দেশাই বার্তা সংস্থা ‌এনাকে বলেছেন, সিটির ৪৫ সহস্রাধিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের ২৫% এরও বেশী হচ্ছেন বাংলাদেশী এবং ৫০% এর বেশী মুসলমান। গত কয়েক সপ্তাহে এ ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা আরো ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরেকজন ভিকটিম। তিনিও বাংলাদেশী। তার মুখে ছুরিকাঘাত করা হয়। ২৫ বছর বয়েসী এই ভিকটিম মোঃ ইন্তাজ আলী এনাকে বলেন, মধ্যরাতে ট্যাক্সি পার্ক করে ব্রঙ্কসের একটি রাস্তায় হাঁটছিলাম। এমন সময় ৩ যুবক এসে আমার নাম জানতে চায়। মুসলিম জানার পরই ওরা আমাকে বেধড়ক মারধোর করে। আমি চৈতন্য ফিরে পেয়ে দেখি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার রেমন্ড ক্যালী বলেছেন, সিলেটের সন্তান আহমেদ শরিফের উপর হামলাকারীকে জামিনহীন আটকাদেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। গ্রাউন্ড জিরোর কাছে মসজিদ নির্মাণের এ বিতর্ক শেষ না হলে মুসলিম বিদ্বেষমূলক মনোভাব কতটা বর্বর হতে পারে সেটি এখন দেখার পালা। এজন্যে কম্যুনিটির লোকজন ভেতরে ভেতরে ভীতসন্ত্রস হয়ে দিনাতিপাত করছেন। অনেকে তারাবী নামাজে অংশ নিচ্ছেন না।

0Shares

COMMENTS